উভয় বাংলার লেখ্য, দৃশ্য ও শ্রাব্য গণমাধ্যমে গত কয়েক বৎসর যাবৎ বলা হচ্ছে যে বাংলা ভাষা দূষিত হয়ে পড়েছে এবং এই দূষণের ফলে বাংলা ভাষা অবিলম্বে ধ্বংস হয়ে যাবে। ভাষাদূষণের অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে, প্রধানত তরুণ সমাজের ইংরেজি ঢঙে বাংলা বলা এবং বাংলা বলার সময় অকারণে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা।
ভাষাদূষণ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রকিবুদ্দিন আহমেদ উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বাংলা ভাষার পবিত্রতা রক্ষা ও দূষণ রোধে একটি রুল জারি করেছিলেন। সংস্কৃতি সচিব, তথ্য সচিব, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বি আর টি সির চেয়ারম্যান, সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান কর্মকর্তা, রেডিও টুডে, রেডিও এ বি সি ও রেডিও ফুর্তির প্রধান কর্মকর্তাকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।
বিজ্ঞ আদালত বাংলাভাষাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার একাধিক কারণ দেখিয়েছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ক) বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করা প্রয়োজন; খ) এই ভাষা বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ, লালনসহ অনেক বিখ্যাত লোকের ভাষা; গ) এ ভাষার জন্যে বাঙালিরা শহীদ হয়েছেন; ঘ) এই ভাষায় রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন; ঙ) ইংরেজি ভাষায় রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলীর অনুবাদ হয়েছে, কিন্তু সে অনুবাদ মূল গীতাঞ্জলীর ধারে কাছেও যেতে পারেনি।
এছাড়া বাংলাভাষার দূষণ রোধ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত কিছ সম্পূরক মতও প্রকাশিত হয়েছে: ক. বাংলা পরিপূর্ণ ভাষা, কারণ এই ভাষার ১) নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে এবং ২) এই ভাষায় যে কোনো ভাব প্রকাশ করা যায়; খ. ভাষার যথোপযুক্ত ব্যবহার মানাবাধিকারের মধ্যে পড়ে; গ) বাংলা বিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা একটি ভাষা, হিন্দি বা উর্দুর মতো আয়োজন করে গড়ে তোলা ভাষা নয়।
বাংলাভাষাকে রক্ষার প্রয়োজনীয়তার সমর্থনে যে যুক্তিগুলো সাধারণত দেখানো হয়ে থাকে সেগুলো ধোপে টেকার মতো নয়। বাঙালি জাতি বাংলা ভাষা বলে বটে, কিন্তু জাতির অস্তিত্বের জন্য ভাষা অপরিহার্য কোন শর্ত নয়। একই জাতি ভিন্ন দুটি ভাষা বলতে পারে। একই মনিপুরি জাতির একটি অংশ বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি ভাষা বলে আর অন্য একটি অংশ মেইতেই মনিপুরি ভাষা বলে। বাংলা ভাষায় রবীন্দ্রনাথ বা লালনের বড় মহান কোনো কবি-সাহিত্যিক না থাকলে কি ভাষাটিকে রক্ষা করার প্রয়োজন নেই? বাংলা যদি নিছকই একটি আঞ্চলিক ভাষা হয়, জাতিসঙ্ঘের ভাষা না হয়, গীতাঞ্জলীর ইংরেজি অনুবাদ যদি মূল গীতাঞ্জলীর চেয়ে অনেক উন্নতও হয়, বিদেশের কোনো গবেষক যদি বাংলা ভাষার প্রাচুর্য নিয়ে গবেষণা না করেন, বাংলা ভাষার কোনো কবি-সাহিত্যিক যদি নোবেল পুরস্কার নাও পেয়ে থাকেন, তবে কি ভাষাটিকে রক্ষা করার প্রয়োজন নেই? যে সব ভাষার জন্যে কেউ প্রাণ দেননি সেগুলো দূষিত হলে কি কোনো সমস্যা নেই? এ যুক্তি মেনে নিলে সাহিত্য-সংস্কৃতিতে ধনী ভাষাগুলোকেই শুধু সুরক্ষা দেয়া হবে, তুলনামূলকভাবে দরিদ্র ভাষাগুলোর বাঁচার অধিকার গ্রাহ্য হবে না।
আদালত যে প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর রুল জারি করেছে (তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, এফ. এম. রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি) সেগুলোর তালিকার দিকে তাকালে বোঝা যায় যে আদালত মনে করে, গণমাধ্যমই ভাষাদূষণের অন্যতম হোতা। আমাদের প্রশ্ন: ভাষা কি শুধু গণমাধ্যমে থাকে? ভাষা থাকে প্রধানত মানুষের মুখে। গণমাধ্যমে ‘খেয়েছি’, ‘যাইনি’ ব্যবহৃত হলেই কি সাধারণ মানুষ ‘খেয়েছি’, ‘যাইনি’ বলা শুরু করে দেবে? এছাড়া মানুষ স্বাভাবিকভাবে কথা বলার সময় কোন ভঙ্গিতে কথা বলবে, কোন শব্দ ব্যবহার করবে তা আদালত ঠিক করে দিতে পারে কিনা বা ঠিক করে দিলেও তা মানা সম্ভব হবে কিনা সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। আর উচ্চ আদালত যদি ইংরেজিতে তার কার্যক্রম চালানোর এখতিয়ার রাখে তবে গণমাধ্যম কেন বাংলা বলার সময় ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে পারবে না সে প্রশ্নও অবান্তর নয়।
বাংলাভাষাকে দূষণমুক্ত করার সপক্ষে সম্পূরক যুক্তিগুলোও একেবারেই জোরালো নয়। হিন্দি-উর্দু-বাংলা-ইংরেজি… সব ভাষাই বিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়, আয়োজন করে আর যাই হোক ভাষা সৃষ্টি করা যায় না। বর্ণমালা থাকাটাও ভাষার জন্যে অপরিহার্য কোনো শর্ত নয়। ৬,০০০ মানব ভাষার মধ্যে শত তিনেক ভাষা মাত্র লিখিত হয়। যেগুলো লিখিত হয় সেগুলোর বেশিরভাগেরই নিজস্ব বর্ণমালা নেই। ইংরেজি-ফরাসি-জার্মানের নিজস্ব বর্ণমালা নেই, কোরিয়ান বা গ্রীকের আছে। জাপানির আছে তিন তিনটি বর্ণমালা। এর মানে কি এই যে কোরিয়ান বা গ্রীকের তুলনায় ইংরেজি-ফরাসি অসম্পূর্ণ ভাষা বা জাপানি অন্য সব ভাষার তুলনায় অনেক বেশি সম্পূর্ণ?
পত্রপত্রিকার মৌসুমী লেখালেখিতে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে বাংলা একটি উন্নতমানের ভাষা। এটি নিছকই একটি বালসুলভ মন্তব্য। কোনো ভাষাই অন্য ভাষার চেয়ে বেশি উন্নত বা কম উন্নত নয়। যে কোনো জাতি তার নিজের ভাষা ব্যবহার করে ভাবপ্রকাশের সব কাজ চমৎকার চালিয়ে নিতে পারে। সমস্যা হয় যখন বাইরের জগৎ থেকে বা ভেতরের কোনো ভাষাভাষীর মনে নতুন কোনো ভাব আসে। তখন শব্দ ঋণ নিতে হয় বা বানিয়ে নিতে হয়। মানসিকভাবে সুস্থ কোনো মানুষ তার ভাষার অনুপযুক্ত ব্যবহার করে না। ভাষা নিজের মতো করে ব্যবহার করার অধিকারই আসলে মানবাধিকার। আমার ভাষা আমি বলব, যেভাবে খুশি সেভাবে বলব। তুমি না বুঝলে, আমাকে জিগ্যেস করো, আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলবো। কিন্তু আমি ঠিক তোমার মতো করে কথা বলতে বাধ্য নই! ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়!’ মানুষের স্বতষ্ফূর্ত ভাষা ব্যবহারকে বাধা দিলেই প্রকৃতপক্ষে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়।
My DH has been on Clomid for almost 3 months levitra prix maroc
The implant failure rate was almost seven folds lower in patients using anti hypertensive medications 0 occasion levitra 10 mg orodispersible