বাংলা ভাষার সমস্যা নিয়ে আলোচনার যে ধারা গত কয়েক দশক ধরে চলে আসছে তাতে দুটি পর্যায় লক্ষ্য করা যেতে পারে। বাংলা ভাষার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার শুরু [সম্ভবত] বিংশ শতকের সত্তরের দশকের মাঝামাঝি কোনো এক বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। তখন থেকে শুরু করে একবিংশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত বাংলাভাষার প্রধান যে সমস্যাটির কথা বিভিন্ন আলোচনায় উঠে আসতো সেটি হচ্ছে: সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা সম্ভব হয়নি। ‘সর্বস্তর’ বলতে বোঝানো হতো প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রকে: ১) প্রশাসন, ২) উচ্চ আদালত এবং ৩) উচ্চশিক্ষা। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলিত না হওয়ার জন্যে দোষ দেয়া হতো [নন্দঘোষ] সরকারকেই। গত কয়েক দশকে বিভিন্ন সরকার অবশ্য বাংলা প্রচলনে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন সরকারি কাজকর্মে বাংলা ব্যবহৃত হয়, নি¤œ আদালতেও বাংলা ভাষায় কাজকর্ম চলে। সব গাড়ির নাম্বার-প্লেট বাংলায় লেখা হয়।
একবিংশ শতকের প্রথম দশকের শেষদিকে ফেব্রুয়ারি মাসগুলোতে বাংলা ভাষার নতুন এক সমস্যার কথা বলা হতে লাগলো: ‘ভাষাদূষণ। নতুন প্রজন্মের একটি অংশ ইংরেজি ঢঙে এবং অন্য একটি অংশ আঞ্চলিক ঢঙে বাংলা শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করছে। বাংলা বলার সময় বাংলা শব্দের পরিবর্তে তারা ইংরেজি, হিন্দি ও আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করছে। বাংলাভাষার ‘করুণ অবস্থা’ নিরসনকল্পে ১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রকিবুদ্দিন আহমেদ। আদালত তাঁর আবেদন আমলে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের উপর রুল জারি করেছিলেন। আমি মনে করি,বাংলা ভাষার দূষণ আসলে রজ্জুতে সর্প দর্শনের মতোই একটি মতিভ্রম। দূষণ নিয়ে হৈচৈ আসলে বাংলা ভাষার প্রকৃত সমস্যাকে আড়াল করে এর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করছে এবং পরিণামে বাংলাভাষী জনগণের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে শ্লথ করে দিচ্ছে।
কমপক্ষে দু’টি উচ্চারণভঙ্গী প্রমিত বাংলার বিকৃতি ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়: ১. ইংরেজি উচ্চারণ ভঙ্গি ও ২. আঞ্চলিক উচ্চারণভঙ্গি। এফ. এম. রেডিওর সঞ্চালক, (উচ্চ) মধ্যবিত্ত পরিবারের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়া ছেলেমেয়েদের কথায় ইংরেজি উচ্চারণভঙ্গী লক্ষ্য করা যেতে পারে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ লোকের প্রমিত ভাষা ব্যবহারে আঞ্চলিক উচ্চারণভঙ্গি লক্ষ্য করা যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই দুই উচ্চারণভঙ্গীর কারণে প্রমিত বাংলার উচ্চারণভঙ্গী বদলে যাবার কোনো সম্ভাবনা আদৌ আছে কিনা।এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাদের জানতে হবে, কমবেশি ত্রিশ কোটি বাংলাভাষীর মধ্যে কত কোটি মানুষের মাতৃভাষা প্রমিত বাংলা? বেশির ভাগ বাঙালি প্রমিত বাংলা বুঝতে পারেÑ এটা যদি ধরেও নিই, সবাই নিশ্চয়ই প্রমিত বাংলা বলতে সক্ষম নন। কত কোটি মানুষ প্রমিত বাংলা আদৌ বলতে পারেন? কত কোটি মানুষ কোনো বিশেষ টান ছাড়া প্রমিত বাংলা বলতে পারেন? কত কোটি মানুষ শিক্ষিত? শিক্ষিত বাঙালিরা ছাড়া অন্যরা কি প্রমিত বাংলা বলতে পারেন? এই পরিসংখ্যানগুলো না পেলে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না, প্রমিত বাংলার উচ্চারণ আদৌ কোনো ঝুঁকির মধ্যে আছে কিনা।
তরুণসমাজের যে অংশ ইংরেজি-ঢঙে প্রমিত বাংলা বলেন তাদের প্রায় সবাইকে দীর্ঘদিন ইংরেজি ভাষা শেখানো হয়েছে। এদের সিংহভাগ ইংরেজি মাধ্যমেই লেখাপড়া করেছেন। কোটি কোটি বাংলাভাষীর ‘সাগরে’ এ ধরনের তরুণ-তরুণীর সংখ্যা এখনও ‘গোস্পদতুল্য’। উভয় বঙ্গ মিলিয়ে প্রায় ত্রিশ কোটি বাংলাভাষীর মধ্যে কত কোটি লোক ইংরেজি বলতে পারেন যে ইংরেজি ঢঙে প্রমিত বাংলা বলা শুরু করবেন? কোনো ভাষা একটা বিশেষ উচ্চারণের দিকে মোড় নিতে হলে, সেই ভাষাভাষী জনসাধারণের একটা বড় অংশ সেই উচ্চারণে সেই ভাষা বলা শুরু করতে হবে। ইংরেজির ধ্বনিতত্ত্বের প্রভাবে বাংলা ধ্বনিতত্ত্বের পরিবর্তন একান্তই কষ্টকল্পনা, কারণ সংখ্যাল্পতার কারণে ইংরেজি-ঢঙে বাংলা বলা লোকেরা প্রমিত বাংলা ভাষার উচ্চারণের কোনো পরিবর্তনই করতে পারবে না।
শুদ্ধ, আঞ্চলিকতার গন্ধহীন, ‘নিকষিত হেম’ প্রমিত বাংলা যাদের মাতৃভাষা, ইংরেজি-ঢঙে কথা বলা লোকদের প্রভাবে তাদের ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক কাঠামো পরিবর্তিত হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। কোনো ভাষাগোষ্ঠীর (ব্যক্তির কথা আলাদা) ধ্বনিতাত্ত্বিক কাঠামো একবার গঠিত হয়ে গেলে সাধারণত স্বল্প সময়কালে সে কাঠামোর আর পরিবর্তন হয় না। ঠিক একই কারণে যারা আঞ্চলিক টানে প্রমিত বাংলা বলেন, তাদের ধ্বনিতাত্ত্বিক কাঠামোর উপরও ইংরেজি-ঢঙে কথা বলা লোকদের প্রভাব পড়ার কথা নয়।
আমরা লক্ষ্য করতে পারি যে ভাষাদূষণের জন্যে সাধারণত এফ. এম. রেডিওকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যত দোষ এফ. এম. ঘোষ! কিন্তু শুধু এফ. এম. রেডিওর পক্ষে কি ত্রিশ কোটি লোকের প্রমিত ভাষা বদলে দেয়া সম্ভব? ইংরেজি ও ফরাসিভাষী অঞ্চলে শত শত এফ. এম. রেডিও আছে [বিশেষত আফ্রিকান বংশোদ্ভূত লোকদের] যেগুলোর সম্প্রচারে বিশেষ উচ্চারণে তথাকথিত ‘দো-আঁশলা’ ইংরেজি-ফরাসি বলা হয়। গত পঞ্চাশ বছরে এই বেতারকেন্দ্রগুলো ইংরেজি বা ফরাসির প্রমিত বা অপ্রমিত কোনো উপভাষার উচ্চারণে কোনো প্রকার প্রভাবই ফেলতে পারেনি।
এফ. এম. রেডিও শুনে তরুণ-তরুণীদের ধ্বনিতত্ত্ব বদলে যাচ্ছে এটাও কষ্টকল্পনা। আসলে এফ. এম. রেডিওগুলো অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য সেই ভাষাই বেছে নিয়েছে যে ভাষায় তাদের সম্ভাব্য খদ্দের-শ্রোতারা কথা বলে থাকে। একই মন্তব্য বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী এবং তার ভাইবেরাদর কর্তৃক পরিচালিত ইংরেজি-আঞ্চলিক শব্দমিশ্রিত ভাষার নাটক-সিরিয়ালগুলো সম্পর্কেও প্রযোজ্য। এই নাটক-সিরিয়ালগুলোকেও বাংলা ভাষা দূষণের জন্যে দায়ী করা হয়। কোনো রেডিও, টিভি-নাটক-সিরিয়ালে ব্যবহৃত ভাষা প্রমিত ভাষায় স্থায়ী পরিবর্তন নিয়ে আসবেÑ এ দাবি ভাষাবিজ্ঞানসম্মত নয়। নাগরিক সাধারণ মানুষ সচরাচর যে ভাষায় কথা বলে রেডিও-টিভি-নাটক-সিরিয়াল সে ভাষাই ব্যবহার করে থাকে, কারণ এর বিনিয়োগকারীরা সাধারণ মানুষের কাছে একদিকে তাদের নিজেদের অনুষ্ঠান-পণ্য ও অন্যদিকে বাজারের অন্যান্য পণ্যের বিজ্ঞাপন পৌঁছে দিতে চায়। বিপননটা এখানে মুখ্য। সরকারি মাল দরিয়ায় ঢালা যেতে পারে, কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ যেখানে আছে সেখানে বিপননের আবশ্যিকতা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সাধারণ মানুষ সাধারণত বলে না, এমন কোনো কৃত্রিম ভাষা যদি ব্যবহৃত হয় কোনো রেডিও বা টিভি অনুষ্ঠানে তবে সে অনুষ্ঠানের দর্শকপ্রিয়তা কমে গিয়ে বিজ্ঞাপিত পণ্যের বিক্রি কমে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন যখন প্রমিত বাংলায় কথা বলে তখন তাদের উচ্চারণে নিজ নিজ মাতৃভাষার ধ্বনিতত্ত্বের প্রভাব লক্ষ্য করা যেতে পারে। এরা সম্মিলিতভাবে সংখ্যায় অনেক, কিন্তু এদের একক কোনো উচ্চারণভঙ্গী নেই। আঞ্চলিক উচ্চারণ একটি নয়, একাধিক (চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, ঢাকা, চাঁপাই-নবাবগঞ্জ, কুষ্ঠিয়া, বীরভূম, মেদিনীপুর…) প্রতিটি অঞ্চলের বিশেষ উচ্চারণভঙ্গীতে যত সংখ্যক লোক প্রমিত বাংলা বলে থাকে তাদের সংখ্যা এত বেশি নয় যে তাদের উচ্চারণের প্রভাবে প্রমিত বাংলার ধ্বনিতত্ত্ব পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আমরা যদি ইংরেজি ঢঙে বলা তথাকথিত বাংরেজি বা ডিজুস বাংলাকেও বাংলার নতুন একটা উপভাষা বলে ধরে নিই তাহলে এটা থেকেও বিপদের কোনো আশঙ্কা নেই, কারণ বক্তা-স্বল্পতার কারণে কোনো উপভাষার পক্ষেই প্রমিত বাংলার ধ্বনিতত্ত্বে কোনো প্রকার স্থায়ী পরিবর্তন আনা কার্যত অসম্ভব। তবে এটা ঠিক যে উপভাষাগুলোর উচ্চারণরীতির সম্মিলিত প্রভাবে প্রমিত বাংলার উচ্চারণরীতি বদলাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও বদলাতে থাকবে। কিন্তু এই পরিবর্তনের স্বরূপ কী হবে তা কখনই সঠিকভাবে বলা সম্ভব হবে না। তবে কয়েক শ বছর পরে মৃত প্রমিত বাংলা ভাষার শব্দের বানানের সাথে সেই শব্দগুলোর তখনকার হালনাগাদ উচ্চারণের তুলনা করে উপরোক্ত পরিবর্তনের স্বরূপ আংশিকভাবে বোঝা গেলেও যেতে পারে।
বাংলা ভাষার আসল সমস্যা দূষণ নয়। বাংলা ভাষার প্রকৃত সমস্যা দুটি। প্রথম সমস্যাটি নিয়ে সত্তরের দশক থেকেই আহাজারি চলছে: সর্বস্তরে এই ভাষার প্রয়োগ নেই। সর্বস্তরে প্রমিত বাংলা প্রয়োগ করতে গেলে বিচারবিভাগ, শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশাসনে এর প্রয়োগ দিয়ে শুরু করতে হবে। এর পর ছড়িয়ে দিতে হবে অন্য সব জায়গায় যেখানে যেখানে বাংলার উপস্থিতি নেই। ভাষার জীবন ও স্বাস্থ্য নির্ভর করে বিচিত্র পেশার ও শ্রেণীর মানুষের মুখে এর বিচিত্র ব্যবহারে। দূষণের ধারণা অমূলক, কিন্তু দূষণ বলে যদি কিছু থাকেও ভাষার সর্বব্যাপী ব্যবহার শুরু হলে সে দূষণ সমস্যার সমাধান আপনিই হয়ে যাবে। যত বিচিত্র ব্যবহার হবে তত বৈচিত্র্য আসবে প্রমিত বাংলার ব্যাকরণে এবং শব্দকোষে। যত কম ব্যবহার হবে ততই স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়বে, দূষিত হবে প্রমিত বাংলা। আইন করে নদীদূষণের মতো ভাষার দূষণও বন্ধ করা যায় না, জনসচেতনতা লাগবে।
বাংলা ভাষার দ্বিতীয় সমস্যা, ভাষাটির অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠাহীনতা।পৃথিবীর অন্য অনেক ভাষার মতোই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাভাষাকে ইংরেজি ভাষার সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়। দীর্ঘ দিন ভারতবর্ষের দাপ্তরিক ভাষা ও আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ার সুবাদে ইংরেজি অবশ্যই বাংলার তুলনায় কুলীনতর ভাষা হিসেবে গণ্য হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই বাংলার (এবং মারাঠি, হিন্দিসহ আরও অনেক দক্ষিণ এশীয় ভাষার) প্রাপ্য অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো ইংরেজিই সব নিয়ে নেয়।
বাঙালিরা যদি এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চায় তবে তাদের একটি ভাষানীতি ঠিক করতে হবে এবং একটি ভাষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। ভাষানীতি, ভাষা-আইন বা ভাষাপরিকল্পনায় কোনো একটি দেশে এক বা একাধিক ভাষা-ব্যবহারের প্রকৃতি ও সীমা নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণ: ১. শিক্ষার মাধ্যম কি হবে, বাংলা নাকি ইংরেজি? ২. গারো বা খাসিয়া ভাষায় উচ্চশিক্ষা দেয়া হবে কিনা। ৩. ককবরোক ভাষায় আদালতের কাজ চালানো হবে কিনা ইত্যাদি। ভাষা আইন ও এর সঠিক প্রয়োগ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষ ভাষার আইনসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করে। উদাহরণ: ১. আদালতের রায় বাংলায় দেয়ার কথা যদি আইনে উল্লেখ থাকে তবে সেই নির্দেশ পালিত না হওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে কি ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে; ২.সাইনবোর্ডে দোকানের নাম বাংলায় না লেখার জন্য কি শাস্তি দেয়া হবে ইত্যাদি।
তবে বাংলা ভাষা আইন প্রণেতা ও এর প্রয়োগকারীদের আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরিম-লে ইংরেজির অপরিহার্যতার কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাদের মনে রাখতে হবে যে ইংরেজি বা পৃথিবীর যে অন্য কোনো ভাষার সাথে বাংলার অবশ্যই কমবেশি প্রতিযোগিতা আছে, কিন্তু কোনো বিরোধ নেই। বাঙালি জাতি ও বাংলাভাষার অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই প্রমিত বাংলা ও প্রমিত ইংরেজি− অন্তত এই দুটি উপভাষা বেশির ভাগ বাংলাভাষীকে যথাসম্ভব ভালোভাবে শিখতে হবে।
Amoxicillin Genital Tract
buy now levitra
Lasix
Buy Doxycycline Online Cheap
Viagra Buy In Canada
Amoxicillin Treatment
Stromectol
Baclofene Les Risques
Buying Real Viagra
Propecia Hair Loss Treatment For Women where can i buy cialis on line
plaquenil sulfate
Viagra Kaufen Mg
propecia before after
Huvjwp Purchase Cheap Flagyl In Rochester plaquenil side effect Psxiyu
cyclosporine will increase the level or effect of ambrisentan by affecting hepatic intestinal enzyme CYP3A4 metabolism buy cialis online in usa Typically, you d want to use cidal antibiotics in those Oh shit clinical scenarios
a clear organic runway through market share gains and capitalizing on improving trends while maintaining expense discipline canadian pharmacy cialis 20mg