২২১, ৬০৫, ৮১৩. ৫১৬..
এ বিজয় তোমাদেরও ছিল।
পেশাদার সৈনিক তোমরা – বেতন নিয়েছ, জীবন দিয়েছ!
নগদ লেনদেনে রসিদের প্রয়োজন নেই বলে
কোন শহীদ মিনারের কোনায় তোমাদের নাম লেখা হয়নি।
অকৃতজ্ঞতায় আমাদের হাতেখড়ি হলো;
বিজয় দিবস এলো, একে একে চলেও গেলো পঁচিশ খানা
তোমাদের কথা কারও মনে পড়ে না।
পড়বেই বা কি করে? কত কি ঘটে গেলো এই পঁচিশ বছরে!
স্বাধীনতার স্থপতিকেই সপরিবারে হত্যা করা হলো।
একাত্তরের কিছু গাজীর হাতে শহীদ হলো অন্য গাজীরা।
সংবিধানে কামড় দিডে বাঙালি জাতিয়তাবাদকে চেটে খেলো কেউ।
ধর্মনিরপেক্ষতার টুকরোটি ছিঁড়ে নিয়ে কোন ভাগাড়ে যে ফেললো
এখনও খোঁজার সাহস পর্যন্ত কেউ করে না ঘেউঘেউয়ের ভয়ে।
মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি, পুনর্বাসিত রাজাকারের দেঁতো হাসি…
চারিদিকে শুধু ভয়, আঁতাত, বিশ্বাসঘাতকতা।
এত ব্যস্ততায় কারও মনে পড়েনি তোমাদের কথা।
এক সময় তুর্ক-মোঘলরা আসতো দিল্লী থেকে
বাংলার স্বাধীনতা কেড়ে নিতে।
তোমরাও দিল্লী থেকে এসেছিলে
তবে বাংলার স্বাধীনতার জন্যে জীবন দিতে।
এমন ঘটনা বাংলার ইতিহাসে দু’বার ঘটেনি।
তবুও তোমাদের কথা কেউ বলেনি।
স্বদেশের জন্যে প্রাণ হারালে তাকে আমরা ‘শহীদ’ বলি।
কিন্তু অন্যের দেশের জন্যে জীবন দিতে হয় যাদের
তারা কি শহীদ, না শহীদের চেয়েও বড়?
তোমাদের জন্যে বাংলার শব্দভা-ারে জানি না আছে কিনা কোন বিশেষণ।
না থাকারই কথা, কারণ ভাষাতো আমাদের অকৃতজ্ঞ মনেরই প্রতিফলন!
পঁচিশ বছর ধরে কত লোকই না ‘সাম্মানিক’ শহীদ উপাধি পেলো!
কোন দলে যোগ দেয়া উচিত ঠিক করতে না পেরে
যুদ্ধের নয় মাস নিয়মিত অফিস করে
যারা খুন হলেন স্বাধীনতার দু’দিন আগে, তারাও শহীদ।
দলীয় কোন্দলে বেঘোরে প্রাণ হারালো যে সেও শহীদ।
দেশি স্বৈরাচারীর গুলিতে যার প্রাণ গেলো সেও শহীদ হলো।
এমনকি সেও, কুচক্রের সাথী যাকে ফাঁসিতে ঝোলালো।
শুধু তোমরা, ২২১, ৫১৬, ৬০৫, ৮১৩…
সম্মুখ যুদ্ধের অগ্নিপরীক্ষায় পাস করেও ‘শহীদ’ উপাধি পেলে না।
তোমাদের জন্যে কোন স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলো না;
‘অনির্বান’ বা ‘চিরন্তন’ কোন শিখাই জ্বললো না;
জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিজাতীয়দের জন্যে গোলাপ দূরে থাক
একটি বাসী-ছেঁড়া গাঁদা ফুলও কেউ রাখলো না।
কিছু লোক তোমাদের নামও নেয় না, দালাল বলে।
ইচ্ছে থাকলেও তোমাদের কথা তোলে না অনেকে, দালাল ভাববে বলে।
এমনকি মুক্তিযোদ্ধারাও, নিজেদের কৃতিত্ব ম্লান হবার অমূলক ভয়ে।
কিন্তু নতুন প্রজন্ম আমরা, বিবেকের দালালি করে এইটুকু জানি
তোমাদের কাছে স্বাধীন বাংলা চিরঋণে ঋণী।
নয় দিনের যুদ্ধে তোমরা প্রাণ দিয়েছ আঠারো হাজার,
শুনেছি, দিনে কমবেশি দু’হাজার করে।
‘না, না, আরও কম হবে’
প্রতিবাদ করে নষ্ট বাম আর মৌলবাদীরা তারস্বরে।
বিশ্বাস করতে হয় ওদের কথা, লাশের অডিটে ওদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা!
ওরাইতো হিসাব কষে দেখিয়েছে,
একাত্তরে ত্রিশ লাখ শহীদ! হতেই পারে না!
সব শেখ মুজিবের বাড়াবাড়ি, রিলিফ নেবার বাহানা।
২২১ এর বউ আর নিকে বসেনি।
স্বামীর স্মৃতি আগলে বিহারে ভাইয়ের বাড়িতে ঝি খাটছে আজ পঁচিশ বছর।
৫১৬ এর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াটা এগোয়নি।
বড় ছেলে আওরঙ্গাবাদে এক চা-দোকানে কাজ করে, ছোটটা আওয়ারা।
বাপের দু’টো পা না থাকলে যা হয় আর কি, কি করা!
৬০৫ আর ৮১৩… থাক দুঃখের গজলে আর রূচি নেই।
তারামন বিবির সন্তানেরাই কি মানুষ হয়েছে?
পঁচিশটি বছর ধরে যে জাতি খোঁজই রাখেনি এই বীরাঙ্গনার
তোমাদের কথা ভাববে তারা, কি আবদার!
৬০৫ এর ছেলে তামিল পত্রিকায় বাংলাদেশের খবর দেখলে খুঁটিয়ে পড়ে।
এই দেশটির মুক্তিযুদ্ধে তার ফৌজি পাইলট বাবা হারিয়ে গেছে।
কতদূরে বাংলাদেশ! তবু কেমন যেন একটা টান অনুভব করে।
কিন্তু বাবার পেনশনের টাকা তুলতে গিয়ে প্রতি মাসে
কন্যাকুমারীর ডাকঘরে মায়ের চোখদু’টো যখন ভিজে আসে
ছেলে বলতে পারে না বাঙালি শহীদদের সন্তানদের মতো:
বাবা দেশের জন্যে জীবন দিয়েছে; মা, চোখ মোছোতো!
৮১৩এর ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে পাঞ্জাব থেকে বাংলাদেশে এসেছিল।
চট্টগ্রামের কুমিরা গ্রামে তারা দেখতে গিয়েছিল
পাহাড়ের উপর টিভি হসপিটালে নাপাক সেনাদের আর্মি ক্যাম্প
যার দখল নিতে গিয়ে তাদের বাবা জীবন দিয়েছিল।
সেখানে গিয়ে তারা দেখলো, বাঙালি ই.পি.আর.দের কবর আছে;
অযত্নে, অবহেলায়, লতাগুল্ম আর পশুপাখির বিষ্ঠায় ঢেকে গেছে, তবুও আছে।
কিন্তু তাদের বাবার চিহ্নমাত্র নেই, ছেলেমেয়ে দু’টো অনেক খুঁজেছে।
২২১, ৫১৬, ৬০৫, ৮১৩…
আমাদের হীনমন্যতাকে তোমরা ক্ষমা করো।
প্রাণ দিতে যে বুকের পাটা লাগে, কৃতজ্ঞ হতে তার চেয়ে কম লাগে না।
সে বুকের পাটা আমাদের নেই বন্ধু, তোমরা অপাত্রে দান করেছো।
তবুও দুঃখ করো না, বাঙালি না বলুক,
বাঙালির ইতিহাস তোমাদের কথা বলবে।
এ বিজয় সেদিন তোমাদেরও হবে।
১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯৬
Lasix
Viagra Pfizer Manufacturers
Precio De Levitra En Farmacias cialis reviews
Cheap Viagra 100mg To Buy In Canada
Viagra Forum Pfizer
le cialis marche
Plaquenil Daajqi