Scroll Top
19th Ave New York, NY 95822, USA

এত পরীক্ষা কেন বাংলাদেশে?

2018-11-26 11.37.44

প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পরিব্যপ্ত যে তিন স্তর বিশিষ্ট শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা গত শ দেড়েক বছর ধরে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি – এটি আমাদের দেশের নিজস্ব উদ্ভাবন নয়। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকাঠামোর সঙ্গে এই শিক্ষাব্যবস্থা পাশ্চাত্য থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। এই ব্যবস্থাটিকে আমরা আমাদের স্বভাবদোষে দিনকে দিন জটিলতর করে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছি।

আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত পাশ্চাত্যের বেশির ভাগ দেশে যেখানে একটি মাত্র মাধ্যমিক ডিগ্রি আছে, বাংলা অঞ্চলে সেখানে সব সময়ই ছিল দুটি ডিগ্রি: মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক। এখন পুরনো দুই গোঁদের উপর নতুন দুই বিষফোঁড়া যোগ হয়েছে: প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক। এর মানে হচ্ছে, পাশ্চাত্যের তুলনায় প্রথম দুই স্তরে আমাদের শিক্ষার্থীরা চারগুন বেশি চুড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে থাকে।

পাশ্চাত্যে প্রথম দুই স্তরের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না। কিন্তু বাংলাদেশে যে কোনো পরীক্ষায় পাশ করলেই শুধু চলে না, শতভাগ নম্বর নিয়ে পাশ করতে হয়। শতভাগের কম নম্বর পেলে হতাশায়-অপমানে আত্মহত্যার ঘটনাও বিরল নয়। এত কষ্ট করে পাশ করা পরীক্ষাগুলোর তেমন কোনো মূল্য নেই এই অর্থে যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় শতভাগ নম্বরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিশ্চয়তা দেয় না। শুধু তাই নয়, উচ্চমাধ্যমিকে উচ্চ নম্বরধারীদের মধ্যেও অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষায় পাশ নম্বরও পায় না।

চারপাশে প্রায়ই লোকজনকে আমরা বলতে শুনি: ‘আজকালতো লেখাপড়া নেই, শুধু পরীক্ষা আছে!’ পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়েছেন যে শিক্ষামন্ত্রী তিনিও একাধিক বার বলেছেন, পরীক্ষার সংখ্যা কমানো হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কার্যে পরিণত করা কার্যত অসম্ভব, কারণ, বাংলাদেশের সমাজ ও জনগণ অতিমাত্রায় পরীক্ষাপ্রবণ। এখানে কামলা হতে পরীক্ষা, আমলা হতে পরীক্ষা, ভবিষ্যতে শুনছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে গেলেও দিতে হবে পরীক্ষা। বাঙালি জাতির এই অতিমাত্রার পরীক্ষা-প্রবণতার কারণ কী?

জ্ঞানচর্চার জন্যে অর্থনৈতিক উন্নতি অপরিহার্য। একাদশ-দ্বাদশ শতকে মুখ্যত অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং আনুসঙ্গিক একাধিক কারণে পরবর্তী কয়েক শতক ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যাশিক্ষা করার পর পাশ্চাত্যের মানুষ জ্ঞানচর্চায় সক্ষম হয়ে উঠেছিল। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে প্রাগৈতিহাসিক এবং ঐতিহাসিকভাবে বঙ্গ অঞ্চল, বিশেষত পূর্ববঙ্গ ছিল ভারতবর্ষের সর্বাপেক্ষা অবহেলিত অঞ্চল। চর্যাপদের যুগে যখন বাঙালি সত্তার কমবেশি উন্মেষ হচ্ছে, বাঙালি তখনও বাঙালি হতদরিদ্র। ‘টালত মোর ঘর নাহি পরবেষী। হাড়িত ভাত নাহি নিতি আবেশী।’ কালক্রমে কৃষি ও শিল্পে কমবেশি সমৃদ্ধি আসলেও বাংলার আর্থিক অবস্থা কখনই এতটা উন্নত হয়ে উঠেনি যে এই বাংলা অঞ্চল জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র এবং বাংলা ভাষা জ্ঞানচর্চার মাধ্যম হয়ে উঠবে।

ঔপনিবেশিক আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি দেওয়া শুরু হওয়া মাত্র বাঙালি মুক্তকচ্ছ হয়ে ডিগ্রি পেতে ছুটেছিল এবং এখনও ছুটছে, কারণ গড় বাঙালি মনে করে, ডিগ্রি মানেই একটি চাকুরি এবং চাকুরি মানেই বৈষয়িক উন্নতির দরজা খুলে যাওয়া। সরকারগুলোও এতে খুশি, কারণ যুবসমাজ যদি ডিগ্রি পেতে ব্যস্ত থাকে, তবে প্রথমত, বেকারের সংখ্যা কম দেখানো যায় এবং দ্বিতীয়ত, ছাত্রসংগঠনগুলোকে বিশেষ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা যায়।

জ্ঞানের প্রতি বাঙালির কোনো আগ্রহ কোন কালে ছিল না, এখনও নেই। জ্ঞান নয়, বাঙালির কাছে লেখাপড়া হচ্ছে শ্রেফ ডিগ্রি পাবার একটি উপায়। যার ডিগ্রি নাই, সেই ব্যক্তি বাঙালির চোখে কখনই শিক্ষিত কিংবা জ্ঞানী হতে পারে না। ডিগ্রি পাওয়া ছাড়াও যে লেখাপড়ার অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে, তা বাঙালির মতো একটি হাভাতে জাতির পক্ষে কখনই বুঝে ওঠা কখনই সম্ভব নয়। যুগান্তরের দারিদ্র্যজনিত দরিদ্র মানসিকতা এর অন্যতম কারণ।

গড় বাঙালি সম্ভব হলে প্রতি ক্লাসেই একটি চুড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে একটি সনদ পেতে চায়। ব্যক্তিপর্যায়ে এর কারণ ঈর্ষা, স্ববর্গীয় চাপ বা পিয়ারগ্রুপ প্রেশার এবং অন্তসারশূন্য এক শ্রেণীবোধ। প্রতিবেশি কিংবা আত্মীয়ের সন্তানের তুলনায় আমার সন্তানের বেশি ডিগ্রি থাকতেই হবে। শুধু তাই নয়, তাকে অবশ্যই বেশি নম্বর পেতে হবে এবং তথাকথিত ‘ভালো’ স্কুলে পড়তে হবে। ‘কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে, ভাই বলে ডাক যদি দেব গলা টিপে! হেন কালে গগনেতে উঠিলেন চাঁদা। কেরোসিন শিখা বলে এস মোর দাদা।’ বাঙালি মাত্রেই আকাশের চাঁদ পেতে চায়। যে পেয়েছে সে ঈর্ষার এবং যে পায়নি সে অবজ্ঞার পাত্র।

জাগতিক উন্নতির যা কিছু লক্ষণ: বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল – সবই পাশ্চাত্য সভ্যতার অবদান। কমলা, আঙ্গুর কিংবা আপেলের মতো এই প্রযুক্তিগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করেই বাঙালি সন্তুষ্ট। এই ধরনের প্রযুক্তি যে নিজেরাও উদ্ভাবন করা যায় এবং এই উদ্ভাবনের সক্ষমতা সৃষ্টির জন্যে কয়েক শতাব্দী ধরে বিচিত্রমুখী জ্ঞানচর্চা যে অপরিহার্য তা যে কোনো পশ্চাদপদ জাতির মতো বাঙালি নীতিনির্ধারকেরাও এখনও বুঝে উঠতে পারেননি।

বাঙালি সমাজ ডিগ্রিমুখী এবং পরীক্ষামুখী হওয়ার কারণটি মূলত অর্থনৈতিক। প্রতিটি ডিগ্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছে গাইডবুক মুদ্রণ, কোচিং, দৈনিক-সাপ্তাহিক-মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাষিক, বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নমুদ্রণ এবং প্রশ্নফাঁস, মিষ্টান্ন প্রস্তুত ও বিক্রয় এবং এর ফলশ্রুতিতে বহুমূত্ররোগের প্রকোপবৃদ্ধির চিকিৎসাসহ বহু বিচিত্র পেশা। বাংলাদেশের অর্থনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত এই পরীক্ষা এবং এই খাত থেকে রাষ্ট্রের বার্ষিক আয় পরিচিত অনেক খাতের চেয়ে অনেক বেশি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষার সংখ্যা দিন দিন বাড়াবে, কারণ পরীক্ষার চাহিদা আছে এবং কে না জানে যে অর্থনীতির অমোঘ নিয়মে চাহিদা থাকলে সরবরাহ থাকবেই।

এই ডিগ্রিমুখী মানসিকতা কিংবা শিক্ষানীতির অব্যবহিত ফলশ্রুতি হচ্ছে সেমিস্টার পদ্ধতি। বছরে একাধিক সেমিস্টার। প্রতি সেমিস্টারে ভর্তি, টুইশনসহ রাজ্যের ফি দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পকেটের সর্বনাশ, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষের পৌষমাস। বাংলাদেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাখা হয়েছে চারটা সেমিস্টার, যাতে সাত তাড়াতাড়ি আপনি বিদ্যা কিনে সার্টিফিকেটখানি পকেটে পুরতে পারেন এবং মালিকপক্ষ বিদ্যা বেচে মুনাফার টাকা ব্যাংকে তুলতে পারে।

সেমিস্টার পদ্ধতিতে  ভর্তি হতে না হতেই কুইজ, মিডটার্ম, প্রেজেন্টেশন, ফাইনাল পরীক্ষার ধাক্কায় জেরবার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পাশের বাইরে কোনো কিছু চিন্তাই করতে পারে না। চার চারটা সেমিস্টার পাশ করার ইঁদুরদৌঁড়ে আমাদের সন্তানদের জীবন থেকে বিতর্ক-আলোচনা, সংস্কৃতিচর্চা, খেলাধুলা ও বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যাচ্ছে। চিন্তা ও বিশ্লেষণশক্তিহীন কিছু ডিগ্রিধারী রোবট তৈরি করতে আমরা হয়তো সক্ষম হচ্ছি, কিন্তু সংস্কৃতিবান ও সৃজনশীল মানুষ তৈরি করতে পারছি কি?

বাংলাদেশের গ্রামে এক সময় দুই খোন্দ ধান হতো, শীতে ধানের ক্ষেত খালি পড়ে থাকতো যেখানে মৌসুমী খেলাধুলা করতে পারতো শিশুকিশোরেরা। আজ তিন বা চার খোন্দ ধান করতে গিয়ে কোনো ধানখেত সম্ভবত আর খালি নেই। এতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ আমরা হয়তো হচ্ছি, কিন্তু অংশগ্রহণমূলক বিনোদন ও ক্রীড়াচর্চাহীন যে জীবন আমরা যাপন করছি, তা কি আদৌ যাপনের উপযুক্ত?

‘ভর পেটে দৌঁড়–তে নেই, চিবিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যকর। ডিগ্রি আগে বাগাই দাদা, প্রাণ বাঁচানো তারপর।’ তড়িঘড়ি করে তথ্য উদরস্থ করে পরীক্ষায় সে তথ্য হুবহু উগড়ে দিয়ে আমরা ডিগ্রি পাচ্ছি সত্য, কিন্ত বাধ্য হয়ে গেলা আর স্বাদ অনুভব করে চিবিয়ে খাওয়া কি এক? মনের আনন্দে মানুষ হাঁটতে পারে, কিন্তু সৈনিকমাত্রেই বাধ্য হয়ে মার্চ করে। সৈনিকদের মতো চৌকশভাবে মার্চ করতে গিয়ে আমরা মানুষের মতো হাঁটতে ভুলে যাচ্ছি। আমাদের অধ্যয়নের সঙ্গে আনন্দের যোগ নেই, যদিও (রবীন্দ্রনাথের মতে) লেখাপড়া বা জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে আনন্দই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত ছিল।

Comments (39)

Levitra Se Necesita Receta

60 Mg Cialis Canadian Pharmacy buy cialis uk

Zithromax Dosage Upper Respiratory Infection buy liquid cialis online

Amoxicillin Breastfeeding cheap cialis online

Where Can Viagra Be Purchased In Canada

Grimberrew buy priligy online usa Lemidecreeri Cialis 20 Mg Posologie

The details of the process are discussed in most physics texts see Plaquenil

Amazon Relational Database Service (RDS)

[url=https://aws.amazon.com/products/compute]Compute[/url] for any workload

And it was that style, coupled with those engaging dulcet tones, that meant that the reputation of the British gentleman was alive and in rude health buy cialis non prescription

More research is needed on the race specific differences in tumor biology, treatment options, and environmental factors that impact the breast cancer course in Black women viagra classification

Patient Name Janet Stone generic cialis vs cialis Therefore, people who take several drugs are at the greatest risk for interactions

can women take propecia High dose vitamin C can induce hyperoxaluric nephropathy and progressive renal failure, especially with diarrhea, oxalate rich diet, metabolic acidosis, and dehydration

I pay a visit daily some sites and blogs to read posts, but this web site offers feature based articles.
alejazakupowa.top

Leave a comment