Scroll Top
19th Ave New York, NY 95822, USA

শেখ মুজিবকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়

Sheikh_Mujibur_Rahman_in_1950

[২৫শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার মিশনের দায়িত্বে ছিলেন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) জেড. এ. খান। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের এই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর মাসিক জার্নালে (Defence journal, March 1998) ‘THE WAY IT WAS’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। প্রবন্ধটির অংশবিশেষের বঙ্গানুবাদ করেছেন ড.শিশির ভট্টাচার্য্য।

২৩শে মার্চ, পাকিস্তান দিবস। সেদিন আমি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিমানে করে ঢাকায় আসছিলাম। প্রতি বছর এই দিনে দেশের সর্বত্র চাঁদ-তারা খচিত পতাকা উড়ানো হয়। কিন্তু ঢাকার উপর দিয়ে যখন উড়ে আসছিলাম তখন নিচে তাকিয়ে দেখলাম, সারা শহরে শুধু বাংলাদেশের পতাকাই উড়ছে।
আমাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে এসেছিল মেজর বিল্লাল। তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আমাকে মার্শাল ল’ হেড কোয়ার্টারে কর্নেল এস. ডি. আহমেদের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কর্নেল আহমদ আমাকে বললেন যে দুই এক দিনের মধ্যেই শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং এর দায়িত্ব নিতে হবে আমাকেই।
সেদিন সন্ধ্যায় মেজর বিল্লাল, ক্যাপ্টেন হুমায়ুন আর আমি ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম। দেখলাম, ওঁর বাড়ির সামনে দিয়ে একটি লেন চলে গেছে। লেনটি শুরু হয়েছে মোহাম্মদপুর থেকে আসা একটি রোড থেকে এবং লেনের পাশে একটি লেক রয়েছে। শেখ মুজিবের বাড়ির সামনে অনেক লোকের ভিড়। পূর্ব পাকিস্তান পুলিশের এক গার্ডকেও দেখলাম সেখানে। আমরা ধানমন্ডিতে ঢুকে সোজা বের হয়ে এলাম। কেউ আমাদের বাধা দিল না।
২৪শে মার্চ সকাল ১১টায় আমি রাও ফরমান আলীর সাথে দেখা করতে গেলাম। রাও ফরমান আলী আমাকে বললেন, পরদিন রাতে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করতে হবে। ‘তুমি তোমার সাথে একজন মাত্র অফিসার নিয়ে একটা সিভিল গাড়িতে করে শেখ মুজিবের বাড়িতে যাবে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসবে।’ আমি তাঁকে জবাব দিলাম: ‘যে ভীড় আমি শেখ মুজিবের বাড়ির সামনে দেখে এসেছি, পুরো এক কম্পানি সৈন্য ছাড়া তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে না।’
মেজর জেনারেল এ.ও. মিটঠা ২৪শে মার্চ সন্ধ্যা ৫টায় পাকিস্তান এয়ার লাইন্সের ফ্লাইটে ঢাকায় এলেন। আমি এয়ারপোর্টেই সরাসরি জেনারেলের সাথে দেখা করলাম এবং তাঁকে রাও ফরমান আলীর নির্দেশের কথা জানলাম। পরদিন সকালে জেনারেল মিটঠা আমাকে জেনারেল আবদুল হামিদের বাসায় নিয়ে গেলেন। জেনারেল হামিদ আমার সব কথা শুনলেন এবং এরপর তিনি মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে ফোন করলেন। জেনারেলকে তিনি জানালেন যে তিনি আমাকে তাঁর কাছে পাঠাচ্ছেন এবং আমি যা যা চাই তা যেন আমাকে দেয়া হয়। নির্দেশ পেয়ে আমি চলে যাওয়ার জন্যে যখন দরজার দিকে এগোচ্ছিলাম তখন জেনারেল আমাকে বললেন: ‘মনে রেখো, শেখ মুজিবকে হত্যা করা চলবে না। যদি তিনি মারা যান তবে তার জন্যে আমি তোমাকেই দায়ী করবো।’
আমি গাড়িতে করে রাও ফরমান আলীর অফিসে গেলাম। তিনি আমাকে জিগ্যেস করলেন, আমার কি কি চাই। আমি বললাম, শেখ মুজিবের বাড়ির একটি প্ল্যান আর গাড়িসহ তিন ট্রুপ সৈন্য দরকার আমার। এরপর আমি তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, শেখ মুজিবের বাড়ির পিছনেই জাপানি কনসুলেট প্রধানের বাড়ি। শেখ মুজিব যদি তাঁর বাড়িতে গিয়ে উঠেন তবে আমি কি করবো? জেনারেল সাহেব আমাকে আমার উপস্থিতবুদ্ধি ব্যবহার করতে বললেন।
সবগুলো রাস্তা আর শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির একটি মডেল তৈরি করা হলো। অস্ত্রশস্ত্র সব বিলিবন্টন করে দেয়া হলো সৈন্যদের মধ্যে। রাতের খাবারের পাট চুকে যাবার পর আমি কম্পানির সব সদস্যদের আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত কললাম। কম্পানিটিকে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত করা হলো। প্রতি গ্রুপে সৈন্যসংখ্যা ২৫ জন। প্রথম গ্রুপের দায়িত্ব ছিল শেখ মুজিবের বাড়ির এলাকাটিকে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। স্থির হলো, এই গ্রুপের সৈন্যদের একটি দল অবস্থান নেবে লেকের পাশের রোডটিতে, দ্বিতীয় দলটি অবস্থান নেবে তার ডানদিকের রোডে এবং তৃতীয় দলটি তার ডান দিকের রোড ধরে আবার ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর রোডে [মিরপুর রোডে] এসে মিশবে। এভাবে জাপানি কলসুলেট প্রধানের বাড়ি আর শেখ মুজিবের বাড়ি ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় গ্রুপটি প্রথম গ্রুপটির কভারেজ নিয়ে পাশের বাড়ির দেয়াল টপকে শেখ মুজিবের বাড়ির কম্পাউন্ডে ঢুকবে এবং ওর বাসভবনের চারপাশে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে যাবে। এরা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবে যাতে কেউ শেখ মুজিবের বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের বাড়ি অর্থাৎ জাপানি কনসুলেট প্রধানের বাড়িতে গিয়ে উঠতে না পারে। তৃতীয় গ্রুপে ছিল ১২ জন সৈন্য। এদের প্রত্যেকের হাতে থাকবে ইলেক্ট্রিক টর্চ। শেখ মুজিবের বাড়িতে ঢুকে প্রথমে নিচ তলার প্রতিটি ঘর এরা সার্চ করবে এবং এর পর তারা উঠে যাবে দোতলায়।
আমাদের রুটটি ছিল এর রকম: বিমানবন্দর-জাতীয় সংসদ ভবন-মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডি। স্থির হয়েছিল, আমার গাড়ি সর্বপ্রথমে থাকবে এবং আমার গাড়ির হেডলাইটগুলোই শুধু জ্বলবে। ক্যাপ্টেন সাঈদ, ক্যাপ্টেন হুমায়ুন আর মেজর বিল্লাল ট্রাকভর্তি সৈন্য নিয়ে আমাদের পিছন পিছন আসবেন। ট্রাকের হেডলাইট নেবানো থাকবে। এটা করলাম এ জন্য যে শুধু হেডলাইট দেখে অন্ধকারে কেউ আঁচ করতে পারবে না কয়টি গাড়ি অগ্রসর হচ্ছে।
একটি সিভিল কারে ক্যাপ্টেন হুমায়ুনকে ধানমন্ডি পাঠানো হলো শেখ মুজিবের বাড়ি রেকি করে আসার জন্য। তার সাথে আরও দু’জন লোক ছিল এবং বলা বাহুল্য তাঁরা সবাই সিভিল ড্রেসে ছিলেন। রাত গভীর হয়ে এলে সৈন্যরা ব্যারাক থেকে বের হয়ে এসে তাদের গাড়িতে উঠে গেল। গাড়িতে অস্ত্র-শস্ত্র-মালামাল যা যা নেবার সবই তোলা হলো। রাত দশটার দিকে ক্যাপ্টেন হুমায়ুন ফিরে এসে জানালেন, মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডি রোডে ব্যারিকেড তৈরি করা শুরু হয়েছে। আমি তখন নির্দেশ দিলাম, কোম্পানির সবগুলো রকেট লাঞ্চার নিয়ে আসতে। আমাকে বলা হয়েছিল যে অপারেশন শুরু হবে মধ্যরাতে। নির্দিষ্ট সময়ের আধ ঘন্টা আগে, রাত সাড়ে এগারাটায় আমি কাজ শুরু করে দিলাম অপারেশনের সময় কমিয়ে আনার জন্যে, বিশেষ করে যাতে বাঙালিরা রোড ব্যারিকেড তৈরি করার জন্যে যথেষ্ট সময় না পান।
২৫শে মার্চ রাত এগারোটায় [তেজগাঁও] এয়ারফিল্ড থেকে রওয়ানা হলাম আমরা। এম.এন. এ. হোস্টেল থেকে যে রাস্তাটা মোহাম্মদপুর পর্যন্ত চলে গেছে সে রাস্তা ধরে আমরা এগোতে লাগলাম। রাস্তার সব আলো নেবানো ছিল, রাস্তার পাশের বাড়িগুলোকে ভুতুড়ে বাড়ি বলে মনে হচ্ছিল। আমার গাড়ির হেডলাইটের আলো অনুসরণ করে এগোচ্ছিল সৈন্যভর্তি তিনটি ট্রাক। ঘন্টায় ২০ মাইল গতিতে গাড়ির লাইনটি এগিয়ে গিয়ে বামদিকে মোড় নিয়ে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর রোডে পড়লো। ধানমন্ডি এলাকা থেকে আমরা তখনও ৪০০ গজের মতো দূরে, এমন সময় আমাদের চোখে পড়লো প্রথম ব্যারিকেডটি। ট্রাক আর অন্যান্য গাড়ি এক জায়গায় জড়ো করে তৈরি করা হয়েছে এই ব্যারিকেড। ক্যাপ্টেন সাঈদের গ্রুপ একত্রিত হলো এবং প্রথম রকেট দুটো চার্জ করা হলো। রাইফেলগুলো থেকেও গুলিবর্ষণ শুরু হলো।
দুই তিন মিনিট পরে আমি গুলিবর্ষণ বন্ধ করতে বললাম, কিন্তু দেখলাম, কেউ আদেশ পালন করছে না। আমি তখন প্রতিটি সৈনিকের কাছে গিয়ে তাকে নিবৃত্ত করলাম। রকেট ল্যাঞ্চারের আঘাতে ব্যরিকেডের কয়েকটি গাড়ীতে আগুন ধরে গিয়েছিল। একটি সাদা ভক্স ওয়াগন গাড়ি জ্বলতে দেখলাম। ব্যারিকেড অবশ্য তখনও অটুট ছিল। আমি ভাবছিলাম, কিভাবে ব্যারিকেডের মধ্য দিয়ে পথ করে নেয়া যায়। যে ট্রাকগুলো সৈন্যদের নিয়ে আসছিল সেগুলো আমি আগে পরীক্ষা করার দেখারও প্রয়োজন বোধ করিনি। এখন দেখলাম, আমাদের সাথে একটি পাঁচ-টনি ট্রাক রয়েছে এবং সেটিতে একটি উইঞ্চও রয়েছে। উইঞ্চ দিয়ে কয়েকটি গাড়ি সরিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে গেলাম।
আরও দুই শত গজ যাওয়ার পর দেখলাম, আরও একটি ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। এবারের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে দুই ফুট ব্যাসের অনেকগুলো পাইপ দিয়ে। পাইপগুলো এত লম্বা যে দুই পাশে দুই উঁচু দেয়ালের মাঝে পুরো রাস্তা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। একটি পাইপের মাঝখানে উইঞ্চ-কেবলটি আটকালাম। এর পর ট্রাক চালু করে একটা পাইপ সরানোর পর রাস্তায় গাড়ি চলার ব্যবস্থা করা গেল। আমরা আবার গাড়িতে উঠলাম এবং ধানমন্ডির দিকে এগিয়ে গেলাম।
আরও দুই শত গজ যাওয়ার পর আরও একটি ব্যারিকেড আমাদের পথরোধ করল। এবারেরটি ইটের তৈরি, উপরে ৩ ফুট উঁচু আর পাশে ৪ ফুট। দু’টি ট্রাকের সামনের অংশ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ব্যারিকেড সরানোর চেষ্টা করলাম প্রথমে কিন্তু গাড়ি চালানোর মতো রাস্তা করা সম্ভব হলো না। এমতাবস্থায় ক্যাপ্টেন সাঈদের গ্রুপকে নির্দেশ দিলাম, হাতে হাতে ইট তুলে রাস্তা সাফ করতে। বাকি দুটি গ্রুপের সৈন্যদের ট্রাক থেকে নেমে পায়ে হেঁেট এগোতে বললাম। আমরা মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডি সড়ক থেকে ডান দিকে মোড় নিয়ে যে রোডে শেখ মুজিবের বাড়ি সে রোড ধরে এগিয়ে গেলাম। প্ল্যান-মোতাবেক ক্যাপ্টেন হুমায়ুনের গ্রুপ শেখ মুজিবের বাড়ির পাশের বাড়িতে ঢুকলো। সেখান থেকে তারা উঠানের উপর দিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে শেখ মুজিবের বাড়ির দেয়াল টপকে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লো। গোলাগুলি শুরু হয়ে গেল। উঠান থেকে কিছু লোক দৌঁড়ে গেটের বাইরে পালিয়ে যাচ্ছিল। গুলি গায়ে লেগে তাদের মধ্যে একজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ল এবং মারা গেল। ইস্ট পাকিস্তান পুলিশের যে সদস্যটি বাড়ির সামনে পাহাড়ায় ছিল সে দৌঁড়ে গিয়ে তাদের ১৮০ পাউন্ডার তাঁবুতে ঢুকে পড়লো এবং খুঁটিসহ তাঁবুটি সাথে নিয়ে লেকের পানিতে ঝাঁপ দিল।
নিকষ কালো অন্ধকার চারিদিকে। মুজিবের বাড়ি বা আশেপাশের কোন বাড়িতেই কোন আলো ছিল না। বাড়ি-তল্লাসী গ্রুপটি এবার শেখ মুজিবের বাড়িতে ঢুকলো। বাড়ির এক দারোয়ানকে ধরে আনছিল আমাদের এক সৈন্য। পাশাপাশি হেঁেট আসছিল দুই জন। বাড়ি থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর হটাৎ দারোয়ানটি একটি দা বের করে আমাদের সৈন্যটিকে আক্রমণ করে বসলো। কিন্তু দারোয়ানটি জানতো না যে আমাদের সৈন্যটিকে অন্য একটি সৈন্য কভার দিচ্ছিল। দারোয়ানটিকে গুলি করা হলো, কিন্তু মেরে ফেলা হলো না।
শেখ মুজিবের বাড়ির নিচ তলায় তল্লাসী চালিয়ে কাউকে পাওয়া গেল না। সার্চপার্টি উপর তলায় উঠে গেল। যে কক্ষগুলো খোলা হলো সেখানেও কাউকে পাওয়া গেল না। একটি কক্ষের দরজায় ভিতর থেকে ছিটকিনি লাগানো ছিল। আমি যখন দোতলায় উঠলাম, তখন আমাকে কেউ একজন বললো যে সেই কক্ষ থেকে শব্দ বের হচ্ছে। আমি মেজর বিল্লালকে বললাম ঐ কক্ষের দরজাটি ভেঙে ফেলতে। আমি তাঁকে আরও বললাম, নিচে গিয়ে ক্যাপ্টেন সাঈদ ফিরে এসেছে কিনা দেখতে এবং এও জেনে আসতে যে জনতা পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়েছে কিনা।
আমি যখন আবার নিচের লেনে গিয়ে শেখ মুজিবের বাড়ির সামনে দাঁড়ালাম তখন দেখলাম, ক্যাপ্টেন সাঈদ গাড়ি নিয়ে এসে পৌঁছেছেন কিন্তু বড় পাঁচ-টনী ট্রাকগুলো ছোট লেনে আটকে গেছে। আমার জীপের উপর রাখা ওয়ারলেস সেটের লাউড স্পীকারে আমি ব্রিগেডিয়ার (পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল) জাহানজেব আরবাবের গলা শুনতে পেলাম: ‘রোমিও রোমিও’। কিভাবে ট্রাকগুলো বের করতে হবে সে ব্যাপারে যখন আমি ক্যাপ্টেন সাঈদকে নির্দেশ দিচ্ছিলাম তখন আমি একটা গুলির শব্দ শুনলাম। এর পরপরই শোনা গেল গ্রেনেড বিস্ফোরিত হবার শব্দ এবং প্রায় সঙ্গে সাব মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ার শুরু হলো। আমি ভাবলাম, কেউ হয়তো শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে।
আমি দৌঁড়ে বাড়ির ভিতরে গিয়ে উপর তলায় উঠে গেলাম। দেখলাম যে কক্ষটি ভিতর থেকে বন্ধ ছিল ঠিক তার সামনে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিব। অত্যন্ত বিপর্যস্ত মনে হলো তাঁকে। আমি শেখ মুজিবকে আমার সঙ্গে নিচে নেমে আসতে বললাম। তিনি আমাকে জিগ্যেস করলেন তাঁর পরিবারের লোকজনের সাথে শেষ দেখা করতে যেতে পারবেন কিনা। আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। যে ঘরে তাঁর পরিবারের লোকজন দরজা বন্ধ করে ছিল সেখানে ঢুকে তিনি তাঁদের সাথে দেখা করলেন। বেশ তাড়াতাড়িই ফিরে এলেন তিনি এবং আমার সাথে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন।
আমি পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কাছে একটি রেডিও ম্যাসেজ পাঠালাম যে শেখ মুজিব এখন আমাদের কব্জায়। শেখ মুজিব তখন আমাকে আবার বললেন যে তিনি ভুলে তাঁর পাইপটি ফেলে দোতলায় এসেছেন এবং সম্ভব হলে তিনি সেটি নিয়ে আসতে চান। তিনি আবার দোতলায় গেলেন এবং আমিও পিছন পিছন গেলাম। শেখ মুজিব ততক্ষণে বুঝে গেছেন যে আমরা তাঁকে হত্যা করবো না। তিনি আমাকে বললেন যে এত কিছু করার প্রয়োজন ছিল না। আমরা টেলিফোন করলে উনি নিজেই গিয়ে ধরা দিতেন। আমি ওকে বললাম যে আমরা দেখাতে চেয়েছিলাম যে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করা যায়।
আমরা নিচে নেমে গিয়ে দেখলাম, ক্যাপ্টেন সাঈদ অবশেষে ব্যারিকেড ভেঙে পথ করে নিতে পেরেছেন। শেখ মুজিবকে মাঝের গাড়িতে বসানো হলো। আমরা ক্যান্টনমেন্টের দিকে ফিরে চললাম। পরে মেজর বিল্লাল আমাকে বলেছিলেন যে আমি যখন নিচে নেমে গিয়েছিলাম গাড়ির অবস্থা দেখতে এবং মেজর বিল্লাল বন্ধ দরজাটি ভাঙার চেষ্টা করছিলেন তখন কেউ একজন [ঘরের ভিতর থেকে?] একটি পিস্তলের গুলি ছুড়ে। কেউ থামানোর চেষ্টা করার আগেই একজন সৈনিক একটি গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে এবং তার পর শুরু করে মেশিনগানের ব্রাশফায়ার। গুলির এত শব্দ শুনে শেখ মুজিব ঘরের ভিতর থেকে চিৎকার করে বললেন, যদি এই নিশ্চয়তা দেওয়া হয় যে তাঁকে হত্যা করা হবে না তবে তিনি নিজেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসবেন। সেই নিশ্চয়তা তাঁকে দেওয়া হলো। শেখ মুজিব ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলে হাবিলদার মেজর (পরে সুবেদার) খান ওয়াজির তাঁর গন্ডদেশে সশব্দে এক চপেটাঘাট করে।
শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আমাকে, কিন্তু আমাকে বলা হয়নি কোথায় বা কার কাছে তাঁকে সোপর্দ করতে হবে। আমি তাঁকে নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেখানে পৌঁছে একটি জীপের সীট খুলিয়ে নিয়ে ল্যান্ডিঙে সেই সীটের উপরে শেখ মুজিবকে বসতে বললাম। দূরে শহর থেকে গোলাগুলির প্রচ- শব্দ ভেসে আসছিল।
জাতীয় সংসদ ভবন থেকে আমি মার্শাল ল হেড কোয়ার্টারে গেলাম। সেখানে পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার গোলাম জিলানীর সাথে দেখা করে আমি মজা করার জন্য বললাম যে আমি এক জনকে গ্রেপ্তার করেছি যার চেহারা মুজিবের মতোই, কিন্তু আমি ঠিক নিশ্চিত নই তিনি আসলেই শেখ মুজিব কিনা। কথাটি শোনামাত্র টিক্কা খান ছুটে যাওয়া স্প্রিঙের মতো লাফিয়ে উঠে বসলেন তাঁর চেয়ারে। গ্রেপ্তার হওয়া লোকটি আসল শেখ মুজিব না নকল কেউ তা যাচাই করার জন্যে কর্ণেল এস. ডি. আহমেদকে পাঠানো হলো জাতীয় সংসদ ভবনে। মিনিট বিশেক পর কর্ণেল এস.ডি. আহমেদ ফিরে এসে বললেন যে আমি সঠিক শেখ মুজিবকেই গ্রেপ্তার করে এনেছি। আমরা তাঁকে ১৪নং ডিভিশনের অফিসার্স মেসে নিয়ে গেলাম। সেখানে একটি কক্ষে রাখা হলো তাঁকে। কক্ষের দরজার সামনে একজন রক্ষী নিযুক্ত হলো।

Comments (34)

দেখা যাচ্ছে, ২৬ মার্চ , ৩২ নম্বরের ভেতর থেকে অন্তত একটা গুলি এবং বাইরে অন্তত একবার ‘দা’ চালানো হয়েছিল। ১৫ অগাস্টে তেমন কিছুই কি হয়নি?

https://buyneurontine.com/ – gabapentin for back pain

Buy Viagra Online Without Prescription

Hey, I think your blog might be having browser compatibility issues.
When I look at your blog in Ie, it looks fine but when opening in Internet Explorer, it has some overlapping.
I just wanted to give you a quick heads up! Other then that, amazing blog!

Leave a comment