‘দাদখানি চাল, মসুরের ডাল, চিনি-পাতা দই, দুটা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ’ আওড়াতে আওড়াতে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘কাজের ছেলে’ কবিতায় খোকাবাবু যাচ্ছিলেন বাজারে। বাবুর মনে ভয়, ‘ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয় ছিঁড়ে দেবে চুল।’ আগামি ৩০শে ডিসেম্বর তারিখের ভোটযুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ: আওয়ামি লীগ ও বি.এন.পি. পন্থী প্রার্থীরা ভোটদাতাদের সামনে পাখিপড়ার মতো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ফর্দ আওড়াতে থাকবেন। নির্বাচনে হেরে গেলে মায়ের হাতে অপদস্থ হবার ভয় তাদেরও আছে বৈকি।
যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় বাংলাদেশে মূলত দুটি দল: ১. আওয়ামী লীগ এবং ২. আওয়ামী লীগ-বিরোধী, অন্তর্লীন স্তরে পরিস্থিতি জটিলতর। বহু শতাব্দী ধরে ঘটে যাওয়া বহু বিচিত্র ঘটনার ঘনঘটার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রশ্নে বাংলাদেশের ভোটদাতারা কমপক্ষে তিনটি খণ্ড বা অংশে বিভক্ত হয়ে আছে। বৃহত্তম প্রথম খণ্ডটি বাঙালি সংস্কৃতি এবং ধর্ম উভয়ই যথাসম্ভব বজায় রাখার পক্ষপাতী। ক্ষুদ্রতর দ্বিতীয় খণ্ডটি ধর্মকে বেশি গুরুত্ব দিতে ইচ্ছুক এবং বাঙালি সংস্কৃতিকে যথাসম্ভব বাদ দিতে বদ্ধপরিকর (এরা মূলত বকধার্মিক অর্থাৎ ধর্মকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে চায় কিনা, সে জটিল বিচারে যাচ্ছি না)। তৃতীয় ক্ষুদ্রতম অংশটি সাধারণত রাষ্ট্রের সাথে ধর্মকে মেলাতে চায় না। এঁদের দাবি: ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি সবার’ (যদিও এঁদের বেশির ভাগ ‘অস্থির নাস্তিক’, অর্থাৎ যৌবনে অগভীর উপলব্ধির ভিত্তিতে নাস্তিক হন, কিন্তু প্রৌঢ় বয়সে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে অন্ততপক্ষে প্রকাশ্যে ধর্মকর্মে মন দেন)।
ভূপৃষ্ঠের টেকটোনিক প্লেটগুলোর মতো বাংলাদেশের এই তিনটি জনখণ্ড পরস্পরকে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে এবং সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো এই তিন জনখণ্ডের কাছে নিজেদের কমবেশি গ্রহণযোগ্য রাখতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই তিন জনখণ্ডের মধ্যে চলমান সংঘাতে কে জিতবে, অথবা এই তিন পক্ষের মধ্যে কী ধরনের মীমাংসা হবে বা না হবে, তার উপর নির্ভর করবে নিকট ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি রাষ্ট্রজাতি গঠন করা সম্ভব হবে কিনা এবং এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে স্থান পাবে কিনা। বাংলাদেশের যে কোনো জাতীয় নির্বাচনের মতো এই তিন জনখণ্ডের মধ্যে চলমান সংঘাতই নির্ধারণ করবে, আগামী ৩০শে ডিসেম্বর তারিখে ’দেখিব খেলাতে কে হারে কে জেতে’, যদিও অনেকে বলবেন, এই নির্বাচন কোনো খেলা নয়, বাংলাদেশের দুই প্রতিযোগী জনখণ্ডের জীবন-মরণের প্রশ্ন, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রশ্ন।
এই তিন জনখণ্ডের বিভিন্ন উপখণ্ড রয়েছে এবং স্বার্থ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এই সব দল-উপদলের মধ্যে সংযোজন-বিয়োজনের ঘটনাও ঘটে থাকে। প্রথম খণ্ডের একটি উপখণ্ড স্বাধীনতার পর পরই জাসদ গঠন করে মূল দলের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হয়েছিল। সত্তরের দশকে তৃতীয় খণ্ডের দুটি প্রধান উপখণ্ড ছিল, যার একটি মস্কোপন্থী, অন্যটি পিকিংপন্থী। মস্কো যেহেতু ১৯৭১ সালে ভারত ও বাংলাদেশের পক্ষে ছিল, সেহেতু মস্কোপন্থী উপখণ্ডটি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল। পিকিংপন্থী উপখণ্ডের একটি অংশ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল বটে, কিন্তু অন্য একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধকে (চীনের তৎকালীন নেতৃত্বকে অনুসরণ করে) ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বিবেচনা করে নির্লিপ্ত ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় খণ্ডের রাজাকার-আলবদর বাহিনী এই নির্লিপ্ত বুদ্ধিজীবীদেরও রেয়াত করেনি, এদের মধ্যে অনেককেই তারা হত্যা করেছিল ১৪ই ডিসেম্বর।
১৯৭১ সালের গণহত্যা ছিল প্রথম ও তৃতীয় খণ্ডের উপর দ্বিতীয় খণ্ডের প্রতিশোধ। দ্বিতীয় খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের একটি অংশ রাজাকার হয়েছিল, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে অত্যাচার করেছিল আপামর বাঙালির উপর। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে ভাবা হয়েছিল, দ্বিতীয় খণ্ড বাংলার ইতিহাসে চিরদিনের জন্যে পরাজিত হলো। কিন্তু রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে দ্বিতীয় খণ্ড পুনরায় যুগপৎ উল্লসিত ও আশাবাদী হয়ে উঠেছিল।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে উপরিউক্ত তিন খণ্ডের সংবেদনশীলতা তিন রকমের। প্রথম খণ্ড ভাবে, যেহেতু বাংলাদেশ তারাই স্বাধীন করেছে সেহেতু বাংলাদেশ তাদেরই পৈতৃক সম্পত্তি। মুক্তিযুদ্ধে অন্যেরা সাথে ছিল, তবে কেউ সাথে না থাকলেও স্বাধীনতা আটকাতো না। দ্বিতীয় খণ্ডতো স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতাই করেছিল এবং এখনও তারা বাংলাদেশকে ‘বাংলাস্থান’ এবং সম্ভব হলে পাকিস্তান বানাতে মুখিয়ে আছে। তৃতীয় খণ্ডের কোনো কোনো নেতা ভেবেছিলেন, বাংলাদেশ তারাই স্বাধীন করবেন। কিন্তু বহু বিচিত্র কারণে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব চলে গিয়েছিল আওয়ামি লীগের প্রধান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে। এই নেতারা এবং তাদের হাল আমলের সমর্থকদের যুগান্তরের দুঃখ এই যে হাতি ঘোড়া গেল তল, কোথাকার কোন শেখ মুজিব, সে কিনা যুদ্ধে অনুপস্থিত থেকেও দেশ স্বাধীন করে ‘রাষ্ট্রপিতা’ হয়ে গেল!
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পর তৃতীয় খণ্ডের কেউ কেউ প্রথম খণ্ডকে প্রস্তাব দিয়েছিল সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে। কিন্তু প্রথম খণ্ড এই প্রস্তাবে কান দেয়নি। এমনিতেই জনগণ প্রথম খণ্ডকেই ভোট দিত, তবুও বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে কমবেশি কারচুপি করে প্রথম খণ্ড নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেছিল। তাতেও অবশ্য সন্তুষ্ট হয়নি তারা, প্রায় দুই দশকের জন্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে একদলীয় শাসন চালু করেছিল। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথম খণ্ডের দলছুট জাসদ এবং তৃতীয় খণ্ডের নেতা বা সমর্থকদের মধ্যে অনেককেই উল্লাস করতে দেখা গিয়েছিল এবং এই উল্লাসকদের কেউ কেউ আজ প্রথম খণ্ডের অন্যতম সহযোগী। প্রথম খণ্ডের বেশ কিছু নেতাও মীরজাফর খোন্দকার মোস্তাক সরকারে যোগ দিয়েছিলেন। তারা অবশ্য বন্দুকের নলের দোহাই দিয়েছিলেন, যে ধরনের দোহাই কারাগারে নিহত প্রথম খণ্ডের চার নেতাকে দিতে দেখা যায়নি।
বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর বাংলাদেশের ইতিহাসের সেনাশাসন যুগের সূচনা হয়। এই যুগের প্রথম পর্বে (১৯৭৫-১৯৮১) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান দ্বিতীয় খণ্ডের কট্টরতম অংশটি, অর্থাৎ যারা রাজাকার-আলবদর হয়েছিল, তাদের পুনর্বাসিত করেছিলেন। দ্বিতীয় পর্বে (১৯৮২-১৯৮৯) এরশাদীয় স্বৈরাচার যুগে এবং দ্বিতীয় গণতান্ত্রিক যুগের প্রথম পর্বে (১৯৯০-১৯৯৫) দ্বিতীয় খণ্ডের সার্বিক অবস্থা প্রথম খণ্ডের তুলনায় ভালো ছিল। দ্বিতীয় গণতান্ত্রিক যুগের দ্বিতীয় পর্বে (১৯৯৬-২০০১) প্রথম খণ্ড ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে দ্বিতীয় খণ্ডের কট্টরতম উপখণ্ডটির সমর্থনের প্রয়োজন হয়েছিল এবং তৃতীয় পর্বে (২০০১-২০০৬) এই উপখণ্ডের নেতারা মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছিলেন। এই পর্বে গ্রেনেড হামলা করিয়ে শেখ হাসিনাসহ প্রথম খণ্ডের প্রধান নেতাদের হত্যা করার চেষ্টা হয়েছিল এবং কয়েকজন নিহতও হয়েছিলেন। অবশেষে ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অব্যবস্থার দায় মাথায় নিয়ে দ্বিতীয় খণ্ড ক্ষমতা থেকে বিদায় হয়েছিল।
তৃতীয় গণতান্ত্রিক যুগের শেষে প্রায় দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক হাইফেনের পর তৃতীয় গণতান্ত্রিক যুগে (২০০৮-২০১৮) প্রথম দল আবার ক্ষমতায় এসে দুটি কাজ করেছে: ১. রাষ্ট্রপিতা হত্যাকারী এবং ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে দ্বিতীয় খণ্ডের কট্টর উপখণ্ডটির প্রথম সারির বেশ কিছু নেতার বিচার করে শাস্তিবিধান করেছে, এবং ২. দেশের প্রভূত উন্নতি করেছে বলে দাবি করছে। দ্বিতীয় খণ্ড অবশ্য অভিযোগ করছে: ১. তৃতীয় গণতান্ত্রিক যুগের দ্বিতীয় পর্বকে (২০১৩-২০১৮) কোনো বিচারেই ‘গণতান্ত্রিক’ বলা যায় না, কারণ এই পর্বে প্রকৃতপক্ষে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে, ৩. উন্নয়নের নামে প্রচুর দুর্নীতি ও পুকুরচুরি হয়েছে এবং ৪. বিরোধী দল গুমখুন, ক্রসফায়ার, কারারুদ্ধ হওয়া সহ চরম দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে।
আর কয়েকদিন পরেই এই দ্বিতীয় পর্বের পরিসমাপ্তি ঘটবে। ভোটযুদ্ধে আবার মুখোমুখি হয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড। তৃতীয় খণ্ডের বেশ কিছু সদস্য আগে থেকেই প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে ছিলেন। নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্বে প্রথম খণ্ডের বেশ কিছু সদস্য যোগ দিয়েছেন দ্বিতীয় খণ্ডে এবং দ্বিতীয় খণ্ডেরও কিছু সদস্য এসে যুক্ত হয়েছেন প্রথম খণ্ডে। প্রথম খণ্ড দাবি করছে যে তাদের সময়ে দেশের প্রভূত উন্নতি হয়েছে, যে দাবি দ্বিতীয় খণ্ডকেও বেমালুম অস্বীকার করতে দেখা যাচ্ছে না। তবে ‘আমরা নির্বাচিত না হলে উন্নয়নের মুক্তধারা থেমে যাবে এবং দেশ ভূতের মতো পিছন দিকে হেঁটে পাকিস্তানের মতো একটি অকার্যকর দেশে পরিণত হবে ’ – প্রথম খণ্ডের এই দাবির সঙ্গে দ্বিতীয় খণ্ড একমত নয়, বলাই বাহুল্য। দুই খণ্ডই যে যথেচ্ছ দুর্নীতি করেছে – এ ব্যাপারে ভোটদাতাদের মনে কোনো সন্দেহ নেই। এখন আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে, কোন খণ্ডের যুবরাজ বেশি দুর্নীতি করেছেন। লক্ষ্য করার মতো বিষয় হচ্ছে, আজন্ম ভারত-বিরোধী দ্বিতীয় খণ্ড এবারের নির্বাচনে ভারতের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করছে না।
ধারণা করা হচ্ছে যে প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডের ভোটদাতার সংখ্যা মোটামুটি স্থির এবং খোকাবাবুরা অর্থাৎ দোদুল্যমান এবং নবীন ভোটাররাই নির্ধারণ করবেন, কোন জনখণ্ডটি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। সমস্যা হচ্ছে, প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যার উপর সংসদীয় পদ্ধতিতে জয়-পরাজয় নির্ভর করে না। এছাড়া বাজারে যাবার পথে ঘোষেদের ননীর ঘুড়ি ওড়ানো, ভোলা-ভুতু-হাবার খেলা দেখতে দেখতে সব ভুলে গিয়ে ছড়ার খোকাবাবু ভুল করে আওড়াতে থাকেন: ‘দাদখানি বেল, মসুরের তেল, সরিষার কৈ, চিনি-পাতা চাল, দুটি পাকা ডাল, ডিমভরা দৈ।’ যার মানে হচ্ছে, আকাশে কার, কোন ঘুড়িটা, কখন উড়বে অথবা ভোলা-ভুতু-হাবারা কে, কোথায়, কেমন খেলবে ইত্যাদি অনেক নিয়ামকের উপর নির্ভর করবে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন মহাসমরে শেষ হাসিটা কে হাসবে।
Toncils Infection Amoxicillin
Fedex Shipping Acticin
cheap viagra kamagra
Zithromax Tiredness
buy kamagra jelly india delivery de kamagra purchase kamagra in u s a
each time i used to read smaller articles that as well
clear their motive, and that is also happening with this post which I am
reading at this time.
Without treatment there may be a significant risk of intestinal cancer. Fqqdxq Prednisone Kdixoh Ou Acheter Du Cialis Pas Cher
propecia online Briefly, RNA was reverse transcribed using T7 oligo dT primers, after which biotinylated cRNA was synthesized through an in vitro transcription reaction
So far I have not had any side effects buy viagra on amazon
cialis dosage den Hartigh, J
had demonstrated suppression of cytokines and chemokines production by doxycycline in LPS stimulated THP 1 cell lines via modulating the phosphorylation of the NF ОєB, p38 and ERK1 2 MAPK pathways 17 taking viagra after covid vaccine International Journal of Cancer, 149 5, 1181 1188