Scroll Top
19th Ave New York, NY 95822, USA

ভাষা নিয়ে কিছু সেকেলে ভাবনার একেলে জবাব

shahid-minar

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের দৃশ্য, পাঠ্য ও শ্রাব্য মিডিয়ায় বাংলা ভাষা নিয়ে যেসব ভাবনা উঠে আসে সেগুলোর গাঁথুনির মধ্যে যুক্তির চেয়ে আবেগ বেশি লক্ষ করা যাবে। বলা হয়ে থাকে: বাংলা ভাষা শুদ্ধ-পবিত্র-সুন্দর। কেউ যখন দাবি করে যে বিশেষ একটি ভাষা ‘শুদ্ধ-পবিত্র-সুন্দর’, তখন তাকে এটাও স্বীকার করতে হবে যে এমন কিছু ভাষাও আছে, যেগুলো ‘অশুদ্ধ-অপবিত্র-অসুন্দর’। কিন্তু সব ভাষাই শুদ্ধ-পবিত্র-সুন্দর হবার কথা, কারণ সব ভাষাই কারও না কারও মাতৃভাষা। ‘মাতৃভাষা’ বাংলা যদি সুন্দরী হয়ে থাকে, তবে ‘ধাত্রীভাষা’ ইংরেজি বা ফরাসিও কুরূপা-কুৎসিৎ হবার কোনো কারণ নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে, ভাষার এই শুদ্ধতা-পবিত্রতা-সৌন্দর্যের মানদ- কী? কোনো স্থানকে পবিত্র করতে কেউ সেখানে গোবরজল ছিটায়, কেউবা ছিটায় গোলাপজল। কোনো নিষ্ঠাবান প-িত ভাবতে পারেন, ‘হাওয়া’, ‘খুন’, ‘সিন্ধুক’-এর মতো শত শত আরবি-ফারসি শব্দ ঢুকে বাংলা ভাষাকে ‘অপবিত্র’ করেছে। কোনো বুজুর্গ বিশ্বাস করতে পারেন, ‘বেদি’, ‘¯œাতক’, ‘লক্ষ্মী’-এর মতো হাজার হাজার সংস্কৃত শব্দ ঢুকে বাংলা ভাষাকে ‘নাপাক’ করে দিয়েছে। এসব ধারনা নিছক কুসংস্কার। অন্য ভাষা থেকে শব্দগ্রহণ করলে ভাষা যদি কলুষিত হয়, তবে আরবি, সংস্কৃতসহ সব ভাষাই কমবেশি কলুষিত। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-জীবনানন্দ-শামসুর রাহমান-জগদীশ চন্দ্র-রোকেয়া যে ভাষায় লিখেছেন তাতেও প্রচুর বিদেশি শব্দ ছিল। বিদেশি শব্দের উপস্থিতি তাঁদের সাহিত্যসৃষ্টিতে কোনো ব্যাঘাত ঘটিয়েছে Ñ এমন অভিযোগ কেউ করেননি।

ভাষা মানিক মিয়া এ্যাভেনিউর মতো দুই একজন নগর পরিকল্পনাকারীর সচেতন নির্মাণ নয়। ভাষা গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথের মতো বহু মানুষের অসচেতন নির্মাণ। কোনো একক মানুষ বা মানবগোষ্ঠীর পক্ষে সচেতনভাবে তার ভাষাকে বদলানো সম্ভব নয়। ভাষা এমন একটি সিস্টেম বা সংশ্রয় যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বদলায়। বিভিন্ন কারনে একটি ভাষার মধ্যে বহু লক্ষ ‘বিদেশি’ শব্দ এসে ভাষাটিকে প্রবহমান, জীবিত রাখে। এতে ভয়ের কিছু নেই, কারণ স্বাগতিক ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ শব্দগুলোর উচ্চারণ এমনভাবে বদলে নেয় যে শব্দগুলো আর বিদেশি থাকে না। আজ বাংলা ভাষায় বন্যার জলের মতো যত ইংরেজি শব্দ ঢুকছে সেগুলো বাংলা ধ্বনিতত্ত্বের নিয়ম মেনে অনতিবিলম্বে বাংলা হয়ে যাবে। এই শব্দগুলো বাংলা শব্দকোষকে সমৃদ্ধ করবে, যেমন একদিন আরবি-ফার্সি-তুর্কি শব্দ বাংলা শব্দকোষকে পরিপুষ্ট করেছিল, অথবা যেমন করে বহু লক্ষ ফরাসি বিশেষ্য-বিশেষণ-ক্রিয়া সমৃদ্ধ করেছিল ইংরেজিকে।

দাবি করা হয়: বাংলা ভাষা সুরেলা, সাঙ্গীতিক। এ দাবি আপেক্ষিক। কারও কানে বিশেষ ভাষাকে সুরেলা, সাঙ্গীতিক মনে হতেই পারে। বিশেষ করে নিজের মাতৃভাষা প্রত্যেকের কাছে সুরেলা মনে হবারই কথা। যে কোনো ভাষা দিয়ে সঙ্গীত সৃষ্টি করা সম্ভব, যদি রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-জীবনানন্দের মতো প্রতিভাবান সেই ভাষা ব্যবহার করেন। কোনো ভাষাকে অধিকতর স্বাস্থ্যবান বা বেগবান করা যায় না। সব ভাষাই সমান স্বাস্থ্যবান, সমান শক্তিশালী, কারণ সব ভাষাই সেই ভাষাব্যবহারকারীদের মধ্যে যোগাযোগের সব রকম প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। যদি ভাষা-ব্যবহারকারীরা আন্তরিকভাবে চায়, তবে যে কোনো ভাষা শিক্ষার মাধ্যম হতে পারে।

সম্প্রতি এক রচনায় বলা হয়েছে, ভাষায় শৃঙ্খলা না থাকলে নাকি চিন্তায় শৃঙ্খলা থাকবে না। চিন্তা কি একান্তভাবে ভাষানির্ভর? বাকপ্রতিবন্ধীরা সুশৃঙ্খল চিন্তা করতে পারে না Ñ এমন দাবি কি যুক্তিসঙ্গত? কেউ যদি ইংরেজি বা প্রমিত বাংলায় সুসংবদ্ধ বক্তব্য রাখতে সক্ষম না হয়, তার মানে এই নয় যে তার চিন্তায় শৃঙ্খলা নেই। তার মানে এই যে সেই ব্যক্তি এই দুটি ভাষা ঠিকমতো শিখে উঠতে পারেনি, অথবা তাকে প্রমিত বাংলা ও ইংরেজি শেখাতে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। যে ব্যক্তি প্রমিত বাংলায় বাক্য শেষ করতে পারে না, সেই একই ব্যক্তি কিন্তু আঞ্চলিক ভাষায় চমৎকারভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে সক্ষম। তাছাড়া, কোনো ভাষা জানলেই যে কেউ সে ভাষায় বক্তৃতা দিতে বা প্রবন্ধ লিখতে সক্ষম হবে Ñ এমনটা মনে করাও ঠিক নয়।

সব ইংরেজ-আরব-জাপানি-চেক-ফরাসি সমান দক্ষতায় প্রমিত ভাষায় কথা বলে Ñ এমনটা ভাবা ভুল। দুই একজন যখন সঠিক উচ্চারণরীতি মেনে প্রমিত ভাষা বলে সবাই তাদের বাহবা দেয়, ঠিক যেমন করে সার্কাসে শারীরিক কসরৎ দেখে মুগ্ধ হয়ে লোকে হাততালি দেয়। তাছাড়া প্রমিতেরও রকমফের আছে। কানাডায় যে ফরাসি প্রমিত, ফ্রান্সে সেটি আঞ্চলিক ভাষা। বুশ-ওবামা-এলিজাবেথ এক প্রমিত ইংরেজি বলেন না। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রমিত উচ্চারণ টায়ে টায়ে মেলে না।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন: ‘তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি!’ পূজা শেষে বিসর্জনে মায়ের মূর্তির দফারফা হয়ে যায়। মায়ের ভাষারও ঠিক একই অবস্থা। একুশের বইমেলা শেষ হলেই বাংলা ভাষার কথা আর কেউ ভাবে না। আদালতে রায় লেখা হয় ইংরেজিতে। শিক্ষাদান চলে ইংরেজি ভাষায়, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। হায়! এই বিশ্ববিদ্যালয় নাকি ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার! খোদ সরকার তার প্রতিষ্ঠানের নাম রাখে ইংরেজিতে: বিজিবি, টেলিটক, বিপিএল… ‘বুঝলেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না!’

বাঙালি পাহাড় পরিমাণ স্তুতি করিতে পারে, তিল পরিমাণ প্রস্তুতি লইতে পারে না। স্তুতির আড়ম্বরে বাংলা ভাষার প্রকৃত সমস্যা আড়ালে থেকে যায়। বাংলা ভাষার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা হয়েছে, কিন্তু এর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা এখনও বাকি আছে। এটাই বাংলা ভাষার প্রকৃত সমস্যা। শুধুমাত্র ১৯৮৭ সালের বাংলা প্রচলন আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তিবিধান করেই বাংলা ভাষাকে অর্থনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। বাংলা ভাষার কাল্পনিক দূষণের জন্যে মড়াকান্না বন্ধ করে বুদ্ধিজীবীরা এর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠায় তৎপর হলে বাংলা ভাষার প্রকৃত মঙ্গল সাধিত হবে।

Comments (23)

Doxycycline Free Shipping

Erfahrungen Mit Cialis Forum purchase cialis online cheap

Combining Amoxicillin And Ciprofloxacin

Ivakqz Use multidrug therapy because drug resistance is such a problem with Mycobacterium tuberculosis. buy prednisone for dogs without perscription

paypal kamagra Zcipod Plaquenil compra cialis farmacia Zyrsda

Leave a comment