যাত্রাপালা: চন্দ্রগুপ্ত-৩। ৩য় অঙ্ক, ১ম দৃশ্য।
[পাটলিপুত্র নগরের গোপন রাজকীয় মন্ত্রণাকক্ষ। চাণক্য উচ্চাসনে উপবিষ্ট। নিম্নাসনে উপবিষ্ট চন্দ্রগুপ্ত]
চাণক্য: ১. বন্ধুকে সন্দেহ করা, ২. শত্রুকে সুযোগ দেয়া, ৩. কী করা উচিত তাহা না জানা এবং ৪. যাহা করার দরকার নাই তাহা করা – মৌর্যবংশের রাজনীতির এই চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য তক্ষশীলার উপাধ্যক্ষ পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে পুনরায় প্রতিফলিত হইল। গৌরমিত্র শাক্য মজ্জব যে প্রকারে পরের প্ররোচনায় এবং বিনা বিবেচনায় পরীক্ষিত বন্ধু তৈজদ্দনকে ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিয়াছিল, তুমিও তেমনি ঐরাবিণকে কোনো প্রকার পূর্বসংকেত না দিয়া হঠাৎ আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করিলে। ভালো করিলে কী? কোনো যন্ত্র যদি ঠিকঠাকমতো কাজ করে, তবে সেই যন্ত্র পরিবর্তন করিয়া কাজ নাই – এই কথা তুমিই কি বল নাই? শম ও দানের মাধ্যমে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্কট বেশ ভালোভাবেই সমাধান করিতেছিলে। হঠাৎ ভেদ-এর আশ্রয় লইবার কী প্রয়োজন ছিল? অন্ততপক্ষে ধর্মাধিকরণের রায় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করিবার সুযোগ তোমার ছিল।
চন্দ্রগুপ্ত: প্রভু, সত্য বলিতে কী, কারণটা অনেকাংশে ব্যক্তিগত। তক্ষশীলার উচ্চস্থানীয় অধ্যাপক-নেতৃবৃন্দের মধ্যে কয়েকজন ভিখারীর মতো আমার কর্মকক্ষে সাক্ষাৎপ্রার্থী হইয়া আসিয়া বসিয়া থাকিত। প্রত্যহ তাহাদের দেখিতে দেখিতে আমি ভিতরে ভিতরে বিরক্ত হইতেছিলাম। শিক্ষকদিগকে আমি সম্মান করি। তাহারা যখন আমার সচিবগণের সম্মুখে দণ্ডায়মান হইয়া ছদ্মবিনয়ে হস্তকণ্ডুয়ন করিতে থাকে, তখন লজ্জায় আমার নিজেরই মাথা কাটা যায়, কারণ আমিওতো একদিন তক্ষশীলার শিক্ষার্থী ছিলাম। তাহারা বলে: ‘ঐরাবাণ অষ্টবর্ষক্রমে যাহা যাহা করিয়াছে, তাহা অপেক্ষা অধিক আমরা করিয়া দেখাইব।’ ঐরাবাণ অষ্টবর্ষ সুযোগ পাইয়াছে, এখনও ইহাদিগকেও সুযোগ দিয়া দেখিতেছি। জন্মগতভাবে না হইলেও পেশাগতভাবে ব্রাহ্মণ এই অধ্যাপকেরা দিতে নয়, পাইতে অভ্যস্ত। রক্তপায়ী জলৌকার আস্যদেশে লবণ অথবা সারমেয়র লালায়িত জিহ্বার সম্মুখে মাংসখ- না ছুঁড়িয়া না দিলে তাহারা আমাকে ছাড়িবে কেন? সামনে নির্বাচন সংগ্রাম, প্রভু। রাজনীতির নিয়ম তথা আপনার উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা উচিত, আমি জানি। কিন্তু প্রথমত আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাহি না এবং রাজনীতিতে আমার নিজেরও একটি স্ট্যাইল আছে। ঐরাবিণ পরীক্ষিত বন্ধু, অনেক সে পাইয়াছে, সুতরাং সহজে শত্রুতা করিবে না। কিন্তু তাহার বুভুক্ষু প্রতিপক্ষকে আরও কিছুদিন ক্ষমতার হালুয়ারুটি হইতে বঞ্চিত রাখিলে তাহারা যে গোপনে গোপনে খৈলদা কিংবা তাহার পুত্র তৈরকের সহিতে যোগাযোগ করিত না, তাহার নিশ্চয়তা কী?
যাত্রাপালা: চন্দ্রগুপ্ত-৩। ৩য় অঙ্ক, ২য় দৃশ্য।
[পাটলিপুত্র নগরের রাজকীয় মন্ত্রণাকক্ষের বহির্ভাগে অবস্থিত তরুবীথি। চাণক্য ও ঐরাবিণ পদচারণা করিতে করিতে বাক্যালাপ করিতেছেন]
ঐরাবিণ: প্রভু, মহান চন্দ্রগুপ্তের ইঙ্গিত ছিল বলিয়াই আমি শেষ দিন পর্যন্ত তক্ষশীলার উপাধ্যক্ষপদ পরিত্যাগ করি নাই। গত অষ্টবর্ষ ধরিয়া স¤্রাটের একনিষ্ঠ সেবার এই কি পুরষ্কার? আমার জন্য একটি সম্মানজনক মহানিষ্ক্রমণের ব্যবস্থা কি তিনি করিতে পারিতেন না?
চাণক্য: কাজটা যে ঠিক হয় নাই তাহা আমিও স্বীকার করি। কিন্তু দেখ ঐরাবিণ, মানুষের উত্থান ও পতনের সহিত কমপক্ষে তিনটি বিষয় জড়িত: ১. ভাগ্য, ২. স্বভাব এবং ৩. চেষ্টা। পবিত্র আর্টিজান খাদ্যাগারে যেদিন আক্রমণ হয়, তার আগের সন্ধ্যায় তোমার পতনতো প্রায় হইয়াই গিয়াছিল, নাকি? তোমার উৎফুল্ল প্রতিপক্ষ ‘চেক ম্যাট’ হইয়াছে ভাবিয়া তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-বিশ্রামাগারে গোলটেবিল বৈঠকে মিলিত হইয়াছিল। তাহার পরও এক বৎসরের অধিক তুমি উপাধ্যক্ষ পদে টিকিয়া গেলে। অষ্টবর্ষকাল তক্ষশীলার উপাধ্যক্ষ থাকা কি সোজা কথা? ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হইলে ইহা কদাপি সম্ভব হইত না।
তোমার যে অনেক গুন আছে তাহা আমিও স্বীকার করি, কিন্তু স্বভাবে দোষও তোমার বড় একটা কম নাই। একবার যে সিদ্ধান্ত তুমি নাও, তাহা হইতে কেহ তোমাকে টলাইতে পারে না। এই অনমনীয় মানসিকতা নেতার জন্যে ক্ষতিকর। প্রয়োজনে ছাড় দিতে জানিতে হইবে। শ্রেফ তোমার কোনো সমর্থক বা আত্মীয়ের স্বার্থহানি হইয়াছে বলিয়া বছরের পর বছর সহকর্মীর প্রাপ্য পদোন্নতি তুমি আটকাইয়া রাখিয়াছ – এ রকম উদাহরণ একাধিক। ক্ষতিগ্রস্তরা তোমাকে রক্তপায়ী রাক্ষসের সমতুল্য মনে করে। অনেকক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধানকে পাশ কাটাইয়া তুমি বিভিন্ন বিষয়ে ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত লইয়াছ। কেহ প্রতিবাদ করিলে উত্তর দিয়াছ: ‘আমরা এই প্রকারেই কার্য করিয়া থাকি!’ তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়কে তোমার পিতা কিংবা পিতামহের সম্পত্তি মনে করিতে শুরু করিয়াছিলে? সিনেটে প্রতিপক্ষের শিক্ষক প্রতিনিধিরা উপাধ্যক্ষ হিসেবে তোমার নাম প্রস্তাব নাও করিতে পারে – এই ভয়ে খাজাঞ্চি কৈমলদ্দন ও হলধর নজম্য সৈহনকে দিয়া রাতারাতি প্রতিপক্ষের যোগ্য নেতৃবৃন্দের নাম কর্তন করাইয়া তোমার অনুগ্রহজীবী ভুঁইফোর নেতাদের নাম সিনেটর তালিকায় ঢুকাইয়া দেওয়া কি শিক্ষক-সুলভ আচরণ হইয়াছিল? তোমার অসংখ্য অপকর্মখচিত উষ্ণীষে ইহা উজ্জ্বলতম ময়ূরপঙ্খ, সন্দেহ নাই।
এবার আসি চেষ্টা প্রসঙ্গে। নৈক্ষলপাড়ায় কার্যালয়ে শিক্ষক প্রতিনিধি তালিকায় প্রতিপক্ষের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ মহান স¤্রাট তোমাকে দিয়াছিলেন। তাঁহার পরামর্শ সত্তেও সম ও দানের মাধ্যমে বিবাদ-নিষ্পত্তির পথে কেন তুমি যাও নাই? আগাগোড়া ভেদ ও দ- প্রয়োগ অর্থশাস্ত্র-অনুমোদিত রাজনীতি নহে। অপ্রয়োজনে কঠোর হইয়া ঢিলটি মারিলে পাটকেলটিতো খাইতেই হইবে। দুই দুইবার মেয়াদ পূর্ণ হইবার পর প্রায় দশ দিবস তুমি সময় পাইয়াছ। এই সময়কালে মহান স¤্রাটকে তুমি জিজ্ঞাসা করিতে পারিতে, তোমার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত তিনি লইয়াছেন। তুমি নিশ্চেষ্ট হইয়া দৈববাণীর জন্য অপেক্ষা করিতেছিলে। দৈববাণীই হইয়াছে। দৈবের উপর কি কাহারও হাত আছে?
যাত্রাপালা: চন্দ্রগুপ্ত-৩। ৩য় অঙ্ক, ৩য় দৃশ্য।
[পাটলিপুত্র নগরের নৈক্ষলপাড়ায় চন্দ্রগুপ্তের রাজকীয় কার্যালয়ের সম্মুখস্ত উদ্যান। চন্দ্রগুপ্ত ও তক্ষশীলার সদ্য-ভূতপূর্ব উপাধ্যক্ষ ঐরাবিণ পদচারণা করিতে করিতে বাক্যালাপ করিতেছেন]
চন্দ্রগুপ্ত: ঐরাবিণ, তুমি মৌর্যবংশের একজন পরীক্ষিত বন্ধু, তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। তক্ষশীলার দায়িত্ব তোমার হস্তে অর্পণ করিয়া আমি যে অষ্টবর্ষকাল নিশ্চিন্ত ছিলাম, তাহাও মিথ্যা নহে। তোমার একাধিক প্রতিপক্ষকে আমি সম ও দান দ্বারা নিরস্ত করিয়াছি। কিন্তু সব দায়িত্বতো তুমি আমার স্কন্ধে ফেলিতে পার না। শিক্ষকদের মধ্যে লক্ষ্যনীয় বিভক্তি যাতে না আসে সেই উদ্দেশ্যে বহু আগেই সম ও দানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা তোমার উচিত ছিল। আমি লক্ষ্য করিয়াছি, তুমি অনমনীয় চরিত্রের অধিকারী এবং সর্বদা চরম পন্থা অর্থাৎ দ- প্রদানে বিশ্বাসী। তোমার প্রতিপক্ষ যে অল্প আয়াসে কিস্তিমাত করিতে পারিয়াছে, তাহার কারণ খুঁজিতে বেশিদূর যাইবার প্রয়োজন নাই। দাবার সবগুলো ভালো গুটিই তাহাদের হাতে ছিল? মিডিয়া, মন্ত্রণালয় সব জায়গায় তাহারাই প্রবেশাধিকার পাইত। আমার নিজের এবং শিক্ষা-অমাত্যের কার্যালয়ে দিবারাত্রি তাহাদের ধর্ণা দিয়া পড়িয়া থাকিতে দেখিয়াছি। ভালো কিছু সৈন্য তোমার ছিল বটে, কিন্তু ক্ষমতাবান গুটি তোমার কয়টা ছিল? যে সকল গুটিকে তুমি ঘোটক ও গজ মনে করিতে যুদ্ধের ময়দানে দেখা গেল, তাহারা প্রত্যেকে মূলত রাষভ, দাবাখেলায় যাহাদের গুটি বলিয়া স্বীকারই করা হয় না। তবে একটিমাত্র ঘোটক, অসৈফল ঐলম, পাল-ছেঁড়া ও বেহাল দুই কিস্তি রৌহমতুঈল্য ও বৈয়তুঈল্য এবং সর্বোপরি অপরিণামদর্শী দুই আ-পদ গজ: কৈমলদ্দন ও নজম্য সৈহনকে লইয়া তুমি যে খুব একটা খারাপ খেলিয়াছ, তাহাও আমি বলিব না।
(ঐরাবিণ কী যেন বলিতে যাইতেছিলেন, কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত পুনরায় কথা বলিতে শুরু করায় থামিতে বাধ্য হইলেন। স্পষ্ট বোঝা গেল, স¤্রাট ঐরাবিণের কথা শুনিতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছুক নহেন)
জানি তুমি কী বলিবে। তোমার কার্যকালে অনেকগুলো বিভাগ খুলিয়া তক্ষশীলার পাঠক্রমে তুমি বৈচিত্র্য আনিয়াছ, এই কথা মিথ্যা নহে। কিন্তু গুপ্তচরের মুখে শুনিলাম, সবগুলো বিভাগে তুমি নাকি সাংবাদিকতার শিক্ষকদিগকে নিয়োগ দিয়াছ। নিন্দুকেরা বলে, তোমার দৃষ্টিতে সাংবাদিকতা নাকি এক সর্বরোগহারী সরবৎ, ফরাসি ভাষায় যাহাকে Panachée (পানাশে) বলে। এই শিক্ষকবৃন্দ তোমার অনুগ্রহভাজন, কিন্তু সাংবাধিকতার ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরা কী প্রকারে হৈকমরিবের বৈকালিক যোগাযোগ কিংবা জৈয়হর্মনের অপরাধ শাস্ত্র পড়াইবে? সেলিমনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে দ্বাদশ জন প্রথম শ্রেণীধারী শিক্ষককে বেমালুম বাদ দিয়া সবগুলা পদে তোমার পছন্দের আযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে কর্তৃপক্ষকে তুমি নাকি বাধ্য করিয়াছিলে? এই সব অভিযোগের মধ্যে একেবারেই সত্যতা নাই Ñ তাহা আমি কেন, হেমায়েতপুরের কোনো বুনিয়াদী পাগলেও বিশ্বাস করিবে না।
যাত্রাপালা: চন্দ্রগুপ্ত-৩। ৩য় অঙ্ক, ৪র্থ দৃশ্য।
[পাটলিপুত্র নগরের রাজকীয় মন্ত্রণাকক্ষের বহির্ভাগে অবস্থিত তরুবীথি। চাণক্য ও তক্ষশীলার নবমনোনীত উপাধ্যক্ষ ঐকত্রজম্মন পদচারণা করিতে করিতে বাক্যালাপ করিতেছেন]
ঐকত্রজম্মন: মহান চন্দ্রগুপ্তের অনুগ্রহে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ নির্বাচিত হইয়াছি। দুর্মুখেরা বলাবলি করিতেছে, মার্জারের ভাগ্যে নাকি শিকা ছিঁড়িয়াছে। আমার পূর্বাপর ইতিহাস আপনার নখদর্পণে। আপনিই বলুন, প্রভু, আমি কি এই পদের যোগ্য নহি?
চাণক্য: প্রিয় ঐকত্রজম্মন, প্রথমেই তোমার একটি ভুল ধারণা সংশোধন করিয়া দিই। বাংলাদেশে কোনো গণবিশ্ববিদ্যালয়ে উপাধ্যক্ষ মহোদয় ‘নির্বাচিত’ হন না। পাটলিপুত্র সরকার তথা চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক তিনি ‘মনোনীত’ হন। প্রত্যেক উপাধ্যক্ষ কোন না কোনভাবে মহান স¤্রাটের হস্তধৃত পুত্তলিকা। তুমিও যে একটি অসহায় পুত্তলিকা বৈ নহ, সেই মহাসত্য নিয়ত স্মরণে রাখিলে আখেরে তোমারই লাভ হইবে। এই সত্য বিস্মৃত হইয়াই ঐরাবিণের কপালে যত দুর্ভোগ। যাক সে কথা। আমি বিশ্বাস করি, যোগ্যতার যথেষ্ট প্রমাণ তুমি দিয়াছ। অধ্যাপক সঙ্ঘের নির্বাচনে তুমি অংশগ্রহণ করিয়াছিলে; প্রাধ্যক্ষ নির্বাচনে কয়েক বার অকৃতকার্য হইয়া শেষবার তুমি জিতিয়াছিলে; সহ-উপাধ্যক্ষের দায়িত্বও তুমি পালন করিয়াছ। তোমার বয়স কম হইতে পারে, গবেষণার অভিজ্ঞতা অন্য অনেকের তুলনায় কম থাকিতে পারে, কিন্তু প্রশাসনের অভিজ্ঞতা কাহারও অপেক্ষা ন্যূন নহে। কে না জানে, তোমার বাঙ্গালা ও ইঙ্গরাজি উচ্চারণে চন্দ্রদ্বীপীয় টান আছে, কিন্তু এইসব ফালতু অভিযোগ কেহ আমলে নিবে না, যদি তুমি মুন্সিয়ানার সহিত প্রশাসন চালাইয়া দেখাইতে পার। প্রসাধন করিতে জানিলে নারীর মুখের কদাকার জরুল যেমন বিউটিস্পটে পরিণত হয়, তেমনি যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারিলে অচিরেই তোমার যাবতীয় খুঁত তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অনুকরণীয় আচরণে পরিণত হইবে।
মনে রাখিও, ক্ষমতা জেরুজালেমের মতো। ‘যে রুহ জালেম’, সে বা সেই ধরনের রুহগুলোই চিরদিন জেরুজালেম কিংবা ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখিতে বাঞ্ছা করে। ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে তুমি নিশ্চয়ই জান, জেরুজালেম প্রথমে ছিল ইহুদিদের, পরে হইয়াছিল মুসলমানদের, তাহার পর খ্রিস্টানদের, তারপর আবার মুসলমানদের এবং বর্তমানে পুনরায় ইহুদিদের। জেরুজালেম এবং ক্ষমতা চিরকাল একজনের হাতে থাকে না। সুতরাং কুটিল-হৃদয় মারওয়ান হইও না, মহৎহৃদয় সালাদিনের মত সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে অগ্রসর হও। সত্য ও ন্যায়ের পথে বিজয় অর্জিত করা কঠিন, তবে অসম্ভব নহে।
উপাধ্যক্ষ হইবামাত্র হালুয়া-রুটি প্রত্যাশিরা তোমাকে ঘিরিয়া ধরিতেছে। তাহারা এমন ভাব দেখাইতেছে যেন একমাত্র তাহাদিগের অক্লান্ত চেষ্টা ও ত্যাগস্বীকারের কারণেই চন্দ্রগুপ্ত তোমাকে উপাধ্যক্ষ মনোনীত করিয়াছে। ভুল। ঐরাবিণ বধ হওয়ার আনন্দে অনেকেই তোমাকে পুষ্পায়িত করিতে আসিতেছে। তোমার কার্যালয়ে পুষ্প-সুনামি হইতেছে বলিয়া ভাবিও না তুমি তাহাদিগের পছন্দের লোক। লক্ষ্য করিলে দেখিবে, প্রতিটি পুষ্পের বৃন্তে রহিয়াছে নারিকেল-শলাকা, যাহা দ্বারা গ্রামদেশে ঝাঁটা তৈয়ার করা হয়। ইহার অর্থ হইতেছে, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের মধুচন্দ্রিমা শেষ হইবার পর নিজস্বার্থের সামান্যতম হানি হইলেই তাহারা একে একে মুক্তকচ্ছ হইয়া তোমাকে ঘাটাইতে এবং ঝাঁটাইতে ছুটিয়া আসিবে।
ক্ষমতাগ্রহণের দ্বিতীয় দিন তোমার কার্যালয়ে গিয়া দেখিলাম, অনুগ্রহকণাপ্রত্যাশী তৃষিত চাতকের ঝাঁক আস্যদেশ বিবৃত করিয়া তোমাপানে তাকাইয়া রহিয়াছে (ভাবিও না, নিছক ‘চা’ পান করিতে চায় বলিয়াই ইহাদের আমি ‘চাতক’ বলিতেছি!)। এক সংখ্যালঘু তারকা চাতককে দেখিলাম, তোমাকে পত্রিকা পড়িয়া শুনাইতেছে। হায়, ন্যূনতম আত্মসম্মানবোধও এই সব অধ্যাপক নামধারীদের নাই। যে চাতকদিগের ভিড়ে ঐরাবিণের নিকটবর্তী হওয়া দুষ্কর হইত, তাহারা এখন কোথায়? দেখ, কেহ কেহ তোমার সিংহাসনের আশেপাশেই ঘুরঘুর করিতেছে কিনা। আমাদের সকলের দুর্ভাগ্য এই যে চাতক এবং (ঐবদুল্ল কদ্রের ভাষায়) কাউয়ায় সমগ্র আর্যাবর্ত ছাইয়া গিয়াছে।
চন্দ্রদ্বীপবাসীরা অবশ্যই মনে করিবে, তুমি শুধু তাহাদের উপাধ্যক্ষ, সুতরাং সব সুবিধা তাহারাই পাইবার অধিকারী। (অনুচ্চ কণ্ঠে) দুর্জনে বলাবলি করিতেছে, তোমার মধ্যেও নাকি আঞ্চলিকতাকে আশকারা দিবার অভ্যাস পুরামাত্রায় আছে। (স্বাভাবিক কণ্ঠে) মনে রাখিও, আঞ্চলিকতা যে কোনো নেতার জন্য মারাত্মক একটি প্রতিবন্ধক। ‘আত্মবৎ সর্বভূতেষূ যঃ পশ্যতি সঃ পণ্ডিতঃ!’ অর্থাৎ যিনি সকল প্রাণীকে আত্মবৎ বিবেচনা করেন তিনিই প-িত। মহান গৌরমিত্রের মতো আঞ্চলিকতা এবং সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সদস্যকে আত্মবৎ বিবেচনা করিবার শক্তি ও ইচ্ছা যদি তোমার থাকে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তুমি স্মরণীয় হইয়া তাকিবে। নচেৎ, ইতিহাসের ছাত্র তুমি, তোমাকে বলা বাহুল্য, ঐরাবিণের মতোই তোমাকে একদিন আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত করিবে, প্রথমে মহান চন্দ্রগুপ্ত (যদি তিনি নিজেই তখনও সম্রাট থাকেন) এবং অতঃপর, ইতিহাস।
cialis 36 heures
https://buylasixshop.com/ – Lasix
Plaquenil
https://buyneurontine.com/ – gabapentin capsules
Viagra Generic Kaufen In Holland
Stromectol
Vendita Viagra Milano
Cialis Effetti Durata buy generic cialis online
Yp Health Care Viagra
Bupropion Online Drugstore India
Prednisone Mqesck