টরন্টো থেকে দুবাই হয়ে ঢাকা ফিরছিলাম। পাশের সিটে বসেছিল স্বাস্থ্যবান, সুপুরুষ, প্রায় ছয় ফুট লম্বা, অনেকটা সালমান খানের মতো দেখতে এক যুবক। সাথে তার স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। আরবিতে ডাবিং করা বলিউড সিনেমা দেখে, পরিবারকে কমবেশি সময় দিয়ে সফরের বারোটি ঘন্টা ওর ইতিমধ্যে কেটে গেছে। লক্ষ্য করেছি, সময়মতো তিনি রোজা ভেঙেছেন। নামাজ পড়ার সময় হলে আমি সিট ছেড়ে উঠে টয়লেটে চলে গেছি, যাতে করে প্রশস্ত জায়গায় আরামে নামাজটা তিনি আদায় করতে পারেন। বাকি সময়টা আমি জার্মান দার্শনিক নীৎসের নির্বাচিত রচনাবলী পড়ায় ব্যস্ত ছিলাম। সারা রাস্তায় বাক্যবিনিময় খুব একটা হয়নি বললেই চলে। আলাপ হলো অবতরণের ঠিক আগে আগে।
বিমানের দরজার ঠিক পাশে আমাদের মুখোমুখি বসেছিল সদাহাস্যমুখী, সেবাপরায়না পোলিশ বিমানবালা অগুস্টিনা। ‘ঐ মোটা বইটা পড়া শেষ? কোনো উপন্যাস? মজার কিছু?’ মুখ টিপে হেসে জিগ্যেস করলো অগুস্টিনা। ‘আপনিই দেখুন না’ বলে বইটি এগিয়ে দিলাম ওর দিকে। ‘ব্যাক কভারটাই এক নজর দেখি বরং (দুই এক পাতা উল্টে) ওরে বাবা! কী ছোটো ছোটো অক্ষর! একটাও ছবি নেই! অডিও বুক হলে না হয় আমি শুনতে রাজি আছি। কাগজের বই, প্রশ্নই আসে না!’ পাশের যুবকও বইটি হাতে নিয়ে এক নজর দেখে সিটের উপর ছুঁড়ে ফেলে বললো: ‘আমিও বই পড়া পছন্দ করি না। তাছাড়া সব বইইতো আজকাল ছবি হয়ে যায়। সিনেমাটা দেখে নিলেই হয়। আমার বাবা বই পড়েন, বাচ্চারাও পড়ে। আমি নিজে কিন্তু কলেজ পাশ করার পর থেকে বই কখনও ছুঁয়েও দেখি না।’
অগুস্টিনা দুবাই থাকে। সপ্তাহে কমপক্ষে দুই বার তাকে দীর্ঘ বিমানযাত্রায় যেতে হয়। প্রতিটি যাত্রার ফাঁকে দুই দিন ছুটি। ‘দুবাই চমৎকার শহর, নিউইয়র্ক বলতে পারেন।’ বললো সেই যুবক, যার নাম ধরা যাক, সালমান বিন ইউসুফ। ষাটের দশকে সৌদি আরবের কট্টর সমাজ ও রাজনীতির উপর তিতিবিরক্ত হয়ে ডক্টর ইউসুফ আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন। সালমানের জন্ম সেখানেই। ‘পরিবারের বাকি সদস্য: চাচারা, মামারা সবাই রিয়াদে থাকে এবং আমাদের পারিবারিক ব্যবসাপাতিও আছে সেখানে।’ বছরে একবার, রমজানে, সালমানকে রিয়াদে আসতেই হয়। ‘আমার বাবা আসতেই চান না। সপরিবারে আমাকেই পাঠান। একমাত্র ছেলে, নাও করতে পারি না।’
‘খারাপ কী? আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে বছরে একবার দেখাতো হলো! বাচ্চাগুলো একটু আরবি শিখলো।’ বললাম আমি। আমার দিকে এক পলক স্থির দৃষ্টিতে তাকালো সালমান। সুদীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো: ‘রিয়াদে প্রথম দিনতো সালাম-আস্সালামে কেটে যায়। কিন্তু তার পর? আমাদের মতো ভদ্রলোকের কী করার আছে রিয়াদে? রিয়াদতো আর দুবাই নয়! সিনেমা-থিয়েটার-ক্লাব-বার কিছুই নেই। বাইরে গিয়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে একটা বিয়ার খেতে ইচ্ছে হলো, পারবেন না। কাঁহাতক ঘরে বসে একটানা বোর হওয়া যায়?
আমার বৌ-বাচ্চারা রিয়াদ একদম পছন্দ করে না। কারণ কী জানেন? এখানে মনে সব সময় একটা আতঙ্ক, এই বুঝি আপনি কোনো একটা আইন অমান্য করলেন কিংবা কোনো নিয়ম ভাঙলেন। কিছু একটা করার আগে আশেপাশের লোকজনকে বার বার জিগ্যেস করে নিশ্চিত হতে হয়। এই দেখুন না, দুবাই এয়ারপোর্টে আমার বৌ আর মেয়েরা হিজাব-নিকাবে আগাপাশতলা শরীর মুড়ে তবে রিয়াদের ফ্লাইটে উঠবে। এই কালো ‘প্যাকেট’ ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনোর কোনো উপায় নেই। ছুটির পর দুবাই ফিরে এসে আবার ‘স্বাভাবিক’ পোষাক পড়ে তবে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে তারা! আমি পুরুষ মানুষ, আমার কী, যে পোষাকে আছি, সেই পোষাকেই থাকবো। আমার বৌ আর কচি দুটি মেয়েতো জবরজং পোষাকের ভিতরে পঞ্চাশ ডিগ্রি গরমে একটানা সিদ্ধ হবে! আমেরিকার মুক্ত সমাজে এদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা, মানতে চায় না। মানবেই বা কেন?’
‘দুবাইতে বিদেশীদের মাথায় কাপড় দিতে হয় না। কিন্তু সৌদি আরবে দেশি-বিদেশি নির্বিশেষে সবাইকে হিজাব-নিকাব করতেই হবে। অসহ্য লাগে আমার! দ্বিতীয়বার যাবার ইচ্ছে নেই! তবে বর্তমান প্রিন্সতো অনেক পরিবর্তন আনছেন। আমি অধীর আগ্রহে বসে আছি, কী হয় দেখার জন্যে।’ অগুস্টিনা মন্তব্য করলো। ‘এ ধরনের পরিবর্তন ষাটের দশকেও অন্য এক প্রিন্স আনতে চেয়েছিলেন। কিসসু করতে পারেননি। আমি অবশ্য তখন জন্মাইনি। বাবার মুখে শুনেছি। সৌদি আরব একটা অদ্ভূত দেশ যেখানে রাজা আধুনিকায়ন করতে চাইলে প্রজারা বাধা দেয়। সৌদি লোকজনের মানসিকতা খুবই কট্টর। এখনি সংস্কারের প্রতিবাদে ব্যবসাপাতি সব বন্ধ করে দিচ্ছে তারা। অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ।’
‘ষাটের দশক আর এখনকার সময়ের মধ্যে তফাৎ আছে।’ বললাম আমি। ‘ষাটের দশকে শীতলযুদ্ধ চলছিল। তখন বৈদ্যুতিন গাড়ি আবিষ্কার হয়নি। নব্বইয়ের দশকে বৈদ্যুতিন গাড়ি রাস্তায় ছেড়েও পেট্রো-অর্থনীতিতে চাঙা রাখতে আমেরিকা সবগুলো গাড়ি মরুভূমিতে নিয়ে গিয়ে ধ্বংস করেছিল, জানেন নিশ্চয়ই। এখন কিন্তু আর ইলন মাস্কদের নিয়ন্ত্রণ করার উপায় নেই, বিভিন্ন কারণে। টেসলা গাড়ি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, দামও কমছে। এক সময় দেখবেন, টয়োটার মতো কোম্পানিও রাস্তায় বৈদ্যুতিন গাড়ি নিয়ে আসবে। সৌর এবং বায়ুশক্তিও কমবেশি ব্যবহৃত হচ্ছে সারা পৃথিবীতে। খনিজ তেলের রমরমা শেষ। এখন দুবাইয়ের মতো সেবাভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে না পারলে সৌদি আরব বিপদে পড়বে।’ কেমন বিপদ? মনে পড়লো, বছর বিশেক আগে সৈয়দ আলী আহসান একদিন কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলেন, ওঁর নানা যখন হজ্ব করতে গিয়েছিলেন, তখন একদিন মাংস খেয়ে হাড্ডিটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলামাত্র কয়েকজন বুভুক্ষু আরব সেই হাড্ডির উপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল!
সালমানও অর্থনীতির আশু পরিবর্তন সম্পর্কে ওয়াকেবহাল। ‘উদ্ভাবক-ব্যবসায়ী ইলন মাস্কতো মনে হচ্ছে আগে পরে মহাশূন্য-শাটল চালু করে ছাড়বে। ও না পারলে অন্য কেউ করবে। ভবিষ্যতে অনেক কিছুই বদলে যাবে এবং কত দ্রুত সব কিছু বদলাবে, আপনি কল্পনাই করতে পারবেন না। (আমার কানের কাছে মুখ এসে নিচুস্বরে) আমার কী মনে হয় জানেন, পরিবর্তনের ধাক্কা লাগবে ধর্মের উপরেও। যেমন ধরুন, আমরা মুসলমানেরা যারা চাঁদে গিয়ে থাকবো, তারা কীভাবে রোজা শুরু করবো? চাঁদের বুকেতো শুনেছি চাঁদ উঠে না, পৃথিবী ওঠে! চাঁদের এক পিঠ নাকি সব সময় অন্ধকার, অন্য পিঠে সব সময় রোদ। অনেক গ্রহে বা উপগ্রহে ছয় মাস ধরে সূর্য নাকি ডুবতেই চায় না, আবার কিছু কিছু গ্রহের আকাশে নাকি রয়েছে একাধিক চাঁদ।
এ ধরনের জায়গায় রোজা রাখা বা ভাঙার কী উপায় হবে? সময়ের যেহেতু কোনো মা-বাপ থাকবে না, সেহেতু নামাজইবা পড়বো কী করে? লোকজন খেয়ালইতো করে না যে আমাদের ধর্মটা, শুধু আমাদের ধর্ম কেন, সব ধর্মই একান্তভাবে পৃথিবীকেন্দ্রিক, কারণ এই সেদিন, মধ্যযুগেও মানুষ ভাবতো, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে সব গ্রহ-নক্ষত্র, পৃথিবীই মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু। হাজার বছর আগের এই ভুল জ্যেতির্বিজ্ঞান, আকাশ-সম্পর্কিত যত কুসংস্কার প্রতিফলিত হয়েছে বেশির ভাগ ধর্মে। এই দেখুন না, আমরা বলি, চাঁদ বা সূর্য ওঠে, ডুবে যায়। কথাগুলো ডাহা মিথ্যা, মানুষের সীমাবদ্ধ চর্মচক্ষে দেখা কিংবা জানার ভুল। এই ভূল কিংবা মিথ্যাই কিন্তু অনেক ধর্মীয় আচার-আচরণ, নিয়ম-নিষ্ঠার মূল ভিত্তি। আপনিতো দেখলাম অনেক বই-টই পড়েন। আমার চেয়ে আপনি ভালো জানবেন। এসব কথা সব দেশে, সবাইকে বলাও যায় না, সৌদি আরবেতো প্রশ্নই আসে না, বোঝেনইতো!’
‘আমার মনে হয় না, মহাশূন্যে গেলেও ধর্মপালনে খুব একটা সমস্যা হবে।’ বললাম আমি। ‘পৃথিবীরই কোনো জায়গা, যেমন ধরা যাক, কাবাশরীফ যেখানে, সেই মক্কার সময় অনুসারে মানুষ রোজা রাখতে কিংবা নামাজ পড়তে পারবে। বাংলাদেশে অনেক মুসলমান সৌদি আরবকে অনুসরণ করে রোজা শুরু করে দেয়, (প্রতিপদ/দ্বিতীয়া তিথির) চাঁদ দেখা যাক বা না যাক।’
‘এত সোজা নয়।’ জবাব দিল সালমান। আমার নিজের বাপ এবং ছেলেমেয়েরা আমেরিকায় গিয়েই বাপদাদার ভিটা সৌদি আরবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চায় না। অন্য গ্রহে বসবাস করতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া মানুষ যে পৃথিবীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে চাইবেই তার নিশ্চয়তা কী? আমি মনে করি, মহাশূন্যের নতুন বাস্তবতায় পৃথিবীর ধর্মকে ভুলেই যাবে সবাই। আজকের ধর্মকে আগামিকালের মানুষ সিরিয়াসলি নেবে না। হাজার পাঁচেক বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে টিকে থাকা ফেরাউনদের ধর্মই কি হাস্যকর মনে হয় না আমাদের কাছে, এই পৃথিবীতেই?’
নামার আগে বলিউড নায়কের সঙ্গে ওর সাদৃশ্যের কথা বলাতে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সালমান। অপরূপা সুন্দরী বৌকে ডেকে বললো: ‘ওগো শুনছো, এই মাত্র আরও একজন বললো, আমি নাকি সালমানের মতো দেখতে!’ ওপরের কেবিন থেকে লাগেজ নামাতে নামাতে আমার দিকে ফিরে চোখ টিপে সালমান বললো: ‘নাহ্, ভাঙরা নাচটা দেখছি ভালো করে শিখতেই হবে এবার। কী স্যার, এক চক্কর নেচে দেখাবো? রিয়াদ আসতেতো এখনও দেরি আছে! হা হা হা।’
instructions for cialis
Cealis Generic
Metforin For Pets
Cialis Cout
cialis buy online usa
Buy Propecia Canada
cialis professional
zithromax dosage for chlamydia
Evidencebased medicine or EBM systematically appraises the available clinical research and uses it to help deliver GENES AND FUTUR E DR EAMS PRESENT PHARMACEUTICAL PRODUCTION LINE Workers package drugs at a pharmaceutical production line in Chinathe thirdlargest prescription drugs market in the world. levitra prezzi
cheap generic cialis 10 aluminum lake, FD C Yellow 6 aluminum lake, lactose monohydrate, magnesium stearate, povidone and talc
buy cialis uk Philadelphia, PA Elsevier Saunders; 2012
here is the full layout and pct buy cialis online no prescription Laurence MUNXSYkOfJSY 6 26 2022
After the preparation of 10 homogenate of each tissue, the samples were centrifuged at 1000 g for 30 min at 4 C best cialis online
nevirapine will decrease the level or effect of voriconazole by affecting hepatic intestinal enzyme CYP3A4 metabolism cialis elevitra professionale PCRs were run on 2 agarose gels, and amplicons of appropriate size were purified and sequenced to confirm loxP integration