Scroll Top
19th Ave New York, NY 95822, USA

নবনির্মিত বাংলাদেশ ভবন

ব্যক্তিরই হোক, কিংবা হোক কোনো জাতির, জীবন কোনক্রমেই পুষ্পশয্যা নয়। টিকে থাকার প্রতিযোগিতা চলে সদাসর্বদা – দুই ব্যক্তি, দুই জাতি, দুই ভাষা, দুই সংস্কৃতি, দুই পোষাকের মধ্যে। জীবনযুদ্ধে যে হেরে যায়, সে মরে যায়, কিংবা জীবন্মৃত হয়ে থাকে। উদাহরণ: ধুতি, লুঙ্গি আর পাতলুনের মধ্যে প্রতিযোগিতায় লুঙ্গি হেরে গিয়ে ঘরের পোষাক হয়ে মুখ লুকিয়েছে, ধুতি অনেকটাই হারিয়ে গেছে, যখন কিনা পাতলুন ব্যাটা বাইরে থেকে উড়ে এসে ঘরে-বাইরে জুড়ে বসেছে।

বাংলা ভাষার আঞ্চলিক প্রতিযোগী হিন্দি আর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগী ইংরেজি। পাঞ্জাবি, হিন্দুস্থানী, চীনা, বর্মী ইত্যাদি বাঙালি জাতির প্রতিযোগী। ভারত, চীনসহ একাধিক জাতি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগী। এই প্রতিযোগিতায় বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি, বাংলাদেশকে টিকে থাকতেই হবে, কারণ আপন দেশে, আপন ভাষা, আপন সংস্কৃতি নিয়ে টিকে থাকার গরজ রয়েছে সিংহভাগ বাঙালির। গরজ বড় বালাই এবং গরজটা মূলত অস্তিত্বের বলে একে অস্বীকার করার উপায় নেই।

‘যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে’ তার মৃত্যু ঠেকায় কে? নিত্য-নতুন জলের ধারা ছাড়া কি স্রোত সৃষ্টি হতে পারে কখনও? দেশজ কোনো সংস্কৃতির সঙ্গে বহিরাগত একাধিক সংস্কৃতি মিশে হাজার বছর আগে বাঙালি সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছিল। একাধিক ভাষা মিলেমিশে সৃষ্টি হয়েছিল বাংলা ভাষা। ভাষা আর সংস্কৃতির বিনির্মাণ অনেকটা দই পাতার মতো। পুরনো খানিকটা দইয়ের সঙ্গে নতুন অনেকটা দুধ মিশে দই তৈরি হয়। বাঙালি সংস্কৃতি, বাংলা ভাষা, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে নব নব ভাব-ভাষা-সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে হবে। ‘দেবে আর নেবে, মিলাবে মিলিবে।’ তবে শিখতে হবে, কীভাবে নিজের যা আছে তা বেমালুম বিসর্জন না দিয়ে পরের ভালোটুকু গ্রহণ করা যায়।

মানব-ইতিহাসে নেবার এবং দেবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সফল রোমান জাতি। এতটাই সফল ছিল তারা যে ল্যাটিন শব্দ, রোমান আইন আজও প্রাসঙ্গিক। রোমান সেনাবাহিনী, রোমান যুদ্ধকৌশল ছিল প্রায় অপ্রতিরোধ্য। এটা তাদের শক্তির কড়ির দিক বা হার্ড পাওয়ার। সাম্রাজ্য বিস্তারের কালে রোমানরা অধিকৃত অঞ্চলে ল্যাটিন ভাষা, রোমান আইন, রোমান চিন্তাধারা ছড়িয়ে দিয়েছিল। গ্রীক ভাষা ল্যাটিনের তুলনায় উন্নত ছিল, রোমানরা গ্রীক শিখেওছিল, কিন্তু তারা উন্নত গ্রীক ভাষা নয়, অপেক্ষাকৃত অনুন্নত ল্যাটিন ভাষাকে অবলম্বন করে সা¤্রাজ্য বিস্তার করেছিল। উপনিবেশিত জাতিসমূহকে গণহারে রোমান নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল, যা ইতিহাসে আর কোনো জাতি করেনি। এইসব নীতি ছিল রোমানদের কোমল যুদ্ধকৌশল বা সফট পাওয়ারের অংশ।

বাংলা ভাষার অস্তিত্বের স্বার্থেই বিদেশি সাহিত্যের অনুবাদ হতে হবে বাংলায় ভাষায়। নব নব ভাব, শব্দ ও বাক্যবন্ধ বাংলা ভাষায় প্রবেশ না করে যদি, তবে আমাদের প্রিয় ভাষাটি সর্বকাজে ব্যবহারযোগ্য একটি চৌকশ ভাষা হয়ে উঠবে না। অন্যদিক, বাঙালি আপাতত একটি অভিবাসনপ্রবণ জাতি। অভিবাসনের প্রয়োজনে লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে বিদেশি ভাষা শিখতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হাজার হাজার ভাষা-শিক্ষক প্রয়োজন, প্রয়োজন শত শত ভাষা শিক্ষাকেন্দ্রের। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী জেলাপর্যায়ে ভাষাশিক্ষা ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী। তাঁর এ আগ্রহের জয় হোক। আপাতত কলেজপর্যায়ে কেন একাধিক ভাষাশিক্ষার ব্যবস্থা করা যাবে না? একটি দশ শালা ভাষা-শিক্ষা পরিকল্পনা প্রণয়ন করলে কেমন হয়?

এতো গেল নেবার দিক। এবার দেবার প্রসঙ্গে আসা যাক। বিদেশি ভাষায় আমাদের সাহিত্যকর্মের অনুবাদ হওয়া প্রয়োজন। সমস্যা হচ্ছে, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আমরা পৃথিবীর অনেক জাতির তুলনায় পিছিয়ে আছি। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকে যে জাতি, তার সাহিত্য যত উন্নতই হোক, অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর কোনো জাতি সেই সাহিত্য পাঠে আগ্রহী হয় না। আগামী দশ-বিশ বছরে এই অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে Ñ এমনটা আশা করা ঠিক হবে না। তবে কোমল যুদ্ধকৌশল ব্যবহার করে অর্থনৈতিক অবস্থার প্রকৃত উন্নতি না হওয়ার ঘাটতি মেটানো যায়।

শঙ্করাচার্য ভারতের চার প্রান্তে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মঠগুলো ছিল একেকটি ধর্মপ্রচারকেন্দ্র। ফরাসিরা আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, ইংরেজরা ব্রিটিশ কাউন্সিল, আমেরিকানরা আমেরিকান সেন্টার এবং সোভিয়েতরা রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই সংস্কৃতিকেন্দ্রগুলোর অন্যতম লক্ষ্য সংশ্লিষ্ট জাতির ভাষা ও সংস্কৃতি প্রচার। সাম্প্রতিককালে চীনারা প্রতিষ্ঠা করছে কনফুসিয়াস সেন্টার। পৃথিবীর সর্বত্র লক্ষ লক্ষ ইউয়ান বৃত্তি দিচ্ছে তারা চীনা ভাষা শেখাতে, চীনে গিয়ে লেখাপড়া করতে। উন্নত জাতি মাত্রেই নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি প্রচারের উপর জোর দেয়, যার অর্থ হচ্ছে, কড়ির পাশাপাশি কোমল যুদ্ধকৌশলও তারা সমানে ব্যবহার করে থাকে।

আমরা বাঙালিরা কী করছি? ফরাসি কিংবা ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদানের জন্যে শ খানেকের উপর ম্যানুয়েল রয়েছে। বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের জন্যে কয়টি ম্যানুয়েল আছে? বাংলা ভাষাজ্ঞান পরীক্ষার জন্য টোফেল বা আই.ই.এল.টি.এস.-এর মতো পরীক্ষা আয়োজনের প্রয়োজনীয়তার কথা আমাদের নীতিনির্ধারকবৃন্দ কখনও ভেবেছেন কি? বাংলাভাষাকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হলে এই সব ম্যানুয়েল ও পরীক্ষার বিকল্প নেই।

মিগ বিমান কিংবা সাবমেরিন সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কড়ি যুদ্ধকৌশলের উপর জোর দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি যে কোমল যুদ্ধকৌশল কিংবা সফট পাওয়ারকে উপেক্ষা করছেন না, তার প্রমাণ, সম্প্রতি তিনি নিজ উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে একটি বাংলাদেশ ভবন প্রতিষ্ঠা করেছেন। মিলনায়তন, সেমিনার কক্ষ, যাদুঘর সম্বলিত সুনির্মিত, সুদৃশ্য এই ভবন ইতিমধ্যে সারা ভারতের বাঙালিদের একটি দ্রষ্টব্য স্থানে পরিণত হয়েছে।

ভারতের চার প্রান্তে চারটি এবং পৃথিবীর বিখ্যাত শহরগুলোতে একটি করে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র কিংবা বাংলাদেশ ভবন প্রতিষ্ঠা করা যায় না কি? এর ফলে বিদেশিরা বুঝবে, বাঙালি শুধু তাদের দেশে এসে কামলা দেয় না; আপাতত গরীব হলেও তাদের একটি উন্নত ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। বিদেশিরা এই কেন্দ্রে এসে বাংলা ভাষা শিখবে, বাঙালি সংস্কৃতিকে জানবে। বাংলা ভাষা শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ কালক্রমে বাংলা ভাষার সাহিত্যকর্ম নিজের ভাষায় অনুবাদে ব্রতী হবেন। এভাবে সারা পৃথিবীর লোক বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতিকে জানবে।

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের একটি দশ শালা প্রকল্প হাতে নিয়ে ঠিকঠাকমতো বিনিয়োগ করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে এক অভূতপূর্ব ফল ফলবে বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রক্ষমতার আসীন ব্যক্তিবর্গ কৈশোরে রপ্ত করা ঐকিক নিয়মের জ্ঞান ব্যবহার করে নির্ধারণ করতে পারেন, একটি সেকেন্ডহ্যান্ড রুশ মিগ বিমান কিংবা চীনা সাবমেরিনের অর্থমূল্যে কয়টি বাংলাদেশ ভবন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। মিগ আক্ষরিক অর্থে মরিচা কিংবা হাওয়ায় ‘উড়ে যাবে’ এবং সাবমেরিনগুলো আগে পরে ‘জলেই যাবে’, কিন্তু সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হলে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি দীর্ঘস্থায়ী হতেও পারে, অনেকটা ল্যাটিন ভাষা ও রোমান আইনের মতো।

উপরের কথাগুলো বলার চেষ্টা করেছি গত ৩১শে মার্চ-২রা এপ্রিল, ২০১৯ শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবনে অনুষ্ঠিত তিন দিন ব্যাপী বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির এক মিলনমেলায়। ‘বঙ্গীয়’ নামক এক প্রতিষ্ঠান যার সভাপতি কথাশিল্পি সেলিনা হোসেন এবং সম্পাদক কামরুল ইসলাম, এই মিলনমেলার অন্যতম আয়োজক। এই মিলনমেলায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্ঠা গওহর রিজভি, কলিকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশন প্রধান, বাংলা একাডেমির সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালক, উভয় বাংলার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, লোকপ্রিয় সাহিত্যিক, আবৃত্তি, সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পিসহ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি। বঙ্গীয় এ বছর বিশ্বমেলার আয়োজন করেছে শান্তিনিকেতনে। আগামি বছর বার্লিনে অনুষ্টিত হবে ২০২০ সালের বিশ্বমেলা।

 

Comments (54)

Canada Pharmacy Online Review

isotretinoin delivered on saturday Hawaii

publicidad de kamagra kamagra energy gell kamagra venta

daily cialis online Methods In an effort to increase the clinical activity of temozolomide, the authors investigated whether its antitumor activity could be enhanced by adding tamoxifen or hypericin, two drugs that are known to inhibit the activity of protein kinase C

buy finasteride 1mg Shapiro MD, Hasbargen J, Hensen J, Schrier RW 1990 Role of aldosterone in the sodium retention of patients with nephrotic syndrome

Surgical and dietary weight loss interventions reduced weight to the same extent buy canadian finasteride 1 mg

CONSORT 2010 statement updated guidelines for reporting parallel group randomized trials viagra 4 hour warning While tamoxifen after local excision for DCIS with or without adjuvant radiotherapy reduced the risk of recurrent DCIS in the ipsi and contralateral breast, it did not reduce the risk of overall mortality

where can i buy cialis on line Jacob Schor for gathering the preliminary research for this article in their OncANP research review on the same topic

propecia the crack ho We consistently observed a decrease in VCAM 1 expression in E 2 supplemented animals with no change in GAPDH expression data not shown

Woah! I’m really enjoying the template/theme of
this blog. It’s simple, yet effective. A lot of times it’s challenging to get that “perfect balance” between user friendliness
and visual appeal. I must say you’ve done a fantastic job with this.
In addition, the blog loads super fast for me on Chrome.
Superb Blog!

New targeted drugs that block the PD 1 protein on immune cells or the PD L1 protein on cancer cells resulted in rapid and long lasting tumor shrinkage in patients with advanced melanoma before and after viagra pics Lung tissue sections were digitized at a magnification of 20xwith a slide scanner VS110, Olympus America, Center Valley, PA

May I simply just say what a relief to find an individual who actually knows what they are discussing on the web.
You certainly know how to bring an issue to light and make
it important. More people really need to look at this and understand this side
of the story. I was surprised that you aren’t more popular because you most certainly have the gift.

Leave a comment