ভিক্টোরীয় যুগে সমতট অঞ্চলের এক অসহায় প-িত মশাই নাকি জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর বেতন স্কুল ইন্সপেক্টর সাহেবের কুকুরের কয়টি ঠেঙের সমান। এর বহুদিন পর প-িতের উত্তরপুরুষেরা দুঃসাহসী হয়ে কুকুরের ঠেঙ বাদ দিয়ে সাহেবের দুই ঠেঙের সমান বেতন দাবি করে বসেছিল। তখন মহারাণী ভিক্টোরিয়া নাকি ক্ষুব্ধ হয়ে পত্রকারদের জানাতে বলেছিলেন, সাহেবরা আদতেই প-িতদের চেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করেন কিনা।
সমতটের সাহেবপাড়ায় যত সাহেব তার কমপক্ষে দ্বিগুন গাড়ি। কতজন অধ্যাপকের গাড়ি আছে? গাড়ি কেনা, গাড়ি রাখা, সারথির বেতনের জন্যে অধ্যাপককে কি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ প্রদান করা হয়? অধ্যাপকেরা কি সাহেবদের মতো কারণে অকারণে রাষ্ট্রীয় খরচে ঘন ঘন বিদেশভ্রমণের সুযোগ পান? অবসরে যাবার পর গড়ে কার বেশি সম্পদ থাকে, অধ্যাপকের, নাকি সাহেবের? অধ্যাপকেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে উপরি আয় করেন। হ্যাঁ, কিছু অধ্যাপকের এ সুযোগ আছে বটে। কিন্তু সাহেবদের মধ্যেও অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারি ইনস্টিটিউটগুলোতে ক্লাস নেন। দুজনের মধ্যে পার্থক্য এই যে, বেসরকারি কর্মস্থলে যাবার জন্যে সাহেব সরকারি গাড়ি হাঁকাতে পারেন। শিক্ষকের গমনাগমনের খরচ তাঁর নিজের।
পদোন্নতি পাওয়ার জন্য একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে সাহেব-কাজী-সিপাহসালারের মতো শুধু নির্দিষ্ট সময় চাকরি করলেই হয় না। তাঁকে নির্দিষ্ট সংখ্যক গবেষণাপত্র লিখতে হয়, দেশে বা বিদেশে গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আসতে হয়। শ্রেণীকক্ষে পড়িয়েই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। বাসায় ফিরেও তাঁকে প্রশ্ন করা, খাতা দেখা, পরের দিনের বক্তৃতার জন্যে প্রস্তুত হওয়া, পদোন্নতি বা আত্মার তাগিদে গবেষণা করা ইত্যাদি হাজারো কাজ করতে হয়। শিক্ষকের সাথে অন্য সব পেশার পার্থক্য হচ্ছে এই যে, শিক্ষকের শিক্ষা পেয়েই একটি অবোধ শিশু তার অসংস্কৃত, অশিক্ষিত পর্যায় অতিক্রম করে কালক্রমে একজন সফল সাহেব-কাজী-সিপাহী-রাজনীতিক এবং সার্থক মানুষ হয়ে ওঠে। সমাজের অন্য কোনো পেশাই শিশুর এই উত্তরণ ঘটাতে পারে না। অন্য কোনো পেশাই ব্যক্তিকে শিক্ষকে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা রাখে না।
বিভিন্ন জাতীয় সঙ্কটে সমতটের জনসমাজ তাকিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মুখের দিকে। তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হয়, জাতিকে দিকনির্দেশনা দিতে হয়। এক-একাদশ নামক সঙ্কটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা দুই নেত্রীর পাশে ছিলেন। শিক্ষকেরা গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কারণেই মাইনাস-টু ফরমুলা কার্যকর করা যায়নি। তখন সাহেব-কাজী-সিপাহসালাররা কেউ রাজপথে ছিলেন না, থাকার কথাও নয়, কারণ তাদেরই কেউ কেউ নাকি অন্তরাল থেকে পুতুলনাচের সুতা টানছিলেন। এক-একাদশ প্রতিরোধ করার সুফল এখন কারা ভোগ করছে? মুজতবা আলী কি সাধে লিখেছেন: ‘দই খাবেন রমাকান্ত, বিকারের বেলায় গোবর্ধন!’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা নাকি ক্লাস নেন না, গবেষণা করেন না, রঙবেরঙের রাজনীতি করেন, অনেকেই নাকি মধ্যরাতের টকসওয়ার। যত দোষ অধ্যাপক ঘোষ! শতকরা কত জন শিক্ষক ক্লাস নেন না, কত জন গবেষণা করেন না, কত জন রাজনীতি করেন? গত কয়েক অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বাজেট কত কমেছে? গবেষণার জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ কি বিনিয়োগ করা হয়েছে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে? ক্ষমতাসীনেরা কখনও কি শিক্ষকদের রাজনীতি করতে নিরুৎসাহিত করেছেন? ছাত্রসংসদ নির্বাচনহীন নামকাওয়াস্তে ছাত্র (মূলত স্বার্থ) রাজনীতির পেছনে কারা ইন্ধন যোগায়? বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরাও কি কোনো একসময় বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের জন্যে দিনের পর দিন হরতাল করেনি?
যদি কারও বিরুদ্ধে ঠিকমতো কর্তব্য পালন না করার অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে সেই শিক্ষককে পদচ্যুত করা হয় না কেন? সমতটের সাহেব-কাজী-সিপাহসালারদের সকলেই কি তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকঠাকমতো পালন করছেন? দক্ষতার মাপকাঠিতে এ দেশের সাহেব-কাজী-সিপাহীরা কোন পর্যায়ে আছেন? বিশ্বের শ্রেষ্ট ৫০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নেই। আহ্লাদিত হবার মতো খবর নয়, তাতে সন্দেহ কী! কিন্তু বিশ্বের শ্রেষ্ট ৫০০ সাহেব-কাজী-সিপাহীসালারদের মধ্যে সমতটের একজন সাহেব-কাজী-সিপাহীসালারও কি আছেন?
৭ম বেতন স্কেলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টাইমস্কেল ছিল, অর্থাৎ কেউ তার স্কেলের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গেলে এবং কোনো কারণে তার প্রমোশন না হলে তাকে অটোমেটিক্যালি উচ্চতর একটি স্কেলে উন্নীত করা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই সুবিধা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে শুধু অধ্যাপককেরা রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে একটি উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হতেন যাকে বলা হয় ‘সিলেকশন গ্রেড’। সেই সিলেকশনও সবাই পেতেন না। অধ্যাপক পদে চাকুরির বয়স কমপক্ষে দশ বৎসর হলে একজন অধ্যাপক সিলেকশান গ্রেড পাবার যোগ্যতা অর্জন করতেন এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকসংখ্যার শতকরা ২৫ ভাগ মাত্র এই গ্রেড পেতেন। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকদের ছিল ‘সীমিত’ সিলেকশন গ্রেড, আর বাকি সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছিল ‘অবারিত’ অটোমেটিক গ্রেড। সুতরাং ৭ম বেতন স্কেল বা তারও অনেক আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন।
৮ম বেতন স্কেলে শিক্ষকেরা নতুন যে বৈষম্যটির শিকার হবেন সেটি নাকি এই যে বেতনের দিক থেকে তাঁরা আর কখনই সাহেবের পর্যায়ে যেতে পারবেন না। যুগ্ম সাহেবের সমপর্যায়েই তাদের চিরতরে থেমে থাকতে হবে। একজন সাহেব যখন নতুন চাকরিতে ঢুকবে তখন কোনো একদিন সর্বোচ্চ বেতন পাবার আশা তিনি করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকেরাও ৭ম বেতন স্কেল পর্যন্ত অনুরূপ আশা করতে পারতেন। ক্ষমতা যখন জেনেশুনে শিক্ষকের মর্যাদাহানি করছে, তখন কেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতার পেশার প্রতি আগ্রহী হবে? কেন তারা বিদেশের উচ্চ বেতন ছেড়ে দেশে ফিরে আসবে, যদি তাদের পেশাকে ন্যূনতম সম্মানটুকুও না দেয়া হয়?
যেহেতু ৮ম বেতন স্কেলে প্রজাতন্ত্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন প্রতি বৎসর নির্দিষ্ট হারে বৃদ্ধি করা হবে, সেহেতু অটোমেটিক টাইম স্কেল বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু অধ্যাপকদের যে বিশেষ সিলেকশন গ্রেড, সেটা কি বাতিল হয়েছে? এর উত্তর হ্যাঁ হতে পারে, নাও হতে পারে। যেহেতু রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশ এখনও বহাল আছে, সেহেতু ধরা নেওয়া যেতে পারে যে অষ্টম বেতন স্কেলেও সিলেকশান গ্রেড অব্যাহত আছে। আবার সিলেকশান গ্রেড যেহেতু এক ধরনের টাইমস্কেল (অটোমেটিক না হলেও) সেহেতু সেটি বাতিল বিবেচিত হতে পারে।
তালি এক হাতে বাজে না। সমতটের বিশেষ আর্থরাজনৈতিক অবস্থার কারণে প-িতমশাইদের একটি ক্ষুদ্র অংশ তাদের তুচ্ছ ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে ক্ষমতার আশেপাশে ঘুরঘুর করেন। সঙ্গত কারনেই শিক্ষকদের সম্পর্কে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয় ক্ষমতাগর্বী রাজনীতিক এবং গুজবপ্রবণ, অক্ষম আমজনতার মনে। শাসকেরা নিজের প্রয়োজনে অধ্যাপকের কাছে এসে বিনয়াবত হয়ে উপদেশভিক্ষা করবেন Ñ এটাই উপমহাদেশের শাশ্বত ঐতিহ্য। প-িতেরা যখন শ্ব-জাতির মতো শাসক বা সাহেবের কাছে গিয়ে অনুগ্রহভিক্ষা করেন, তখনই স্ব-জাতির সম্মানহানির দায়টাও তাদের উপরই অনেকখানি বর্তায় বৈকি।
Plaquenil
buy cialis
z pack for strep
propecia medication
Buy Levitra Wholesale cheap kamagra jelly india viagra zaragoza
does viagra stop you coming early 7 of breast cancers in women show defects in mismatch repair pathway MMR 17, 18