১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে অপারেশ সার্চলাইট দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য শহরের বিরোধীদের শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে ২৫শে মার্চ রাতেই শুরু হয় অপারেশন সার্চলাইট-২। কয়েকটি শহর যেমন, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও পাবনার পরিস্থিত ছিল পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের জন্য ‘খুবই উদ্বেগজনক’। পাকিস্তানিদের দৃষ্টিকোণ থেকে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ছিল বিশেষভাবে নাজুক, কারণ সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈনিকের সংখ্যা ছিল মাত্র ছয় শত এবং বাঙালি সৈনিকের সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ হাজার। চট্টগ্রামের নাজুক অবস্থা সামাল দেবার জন্য জি.ও.সি. টিক্কা খান ২৫শে মার্চ রাতেই কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানরত ৫৩তম ব্রিগেডের অধিনায়ক ইকবাল শফিকে চট্টগ্রামের দিকে এক দল সৈন্য পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদেশ পাওয়ামাত্র লেফটেনেন্ট কর্ণেল শাহপুর খানের অধিনায়কত্বে এফ. এফ. রেজিমেন্টের ২৪নং ব্যাটেলিয়ন চট্টগ্রামে পাকবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড ধরে রওয়ানা হয়ে যায়। যতক্ষণ এই সৈন্যরা এসে না পৌঁছায় ততক্ষণ চট্টগ্রামে অবস্থানরত বালুচ রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাতেমিকে চট্টগ্রামকে পরিস্থিতি সামাল দেবার নির্দেশ দেয়া হয়।
চট্টগ্রামের হালিশহরে অবস্থিত ই.পি.আর. এর ৬নং সেক্টর সদরে বাঙালি অফিসার ছিলেন মাত্র দুই জন। মেডিক্যাল অফিসার মেজর আমিনুল ইসলাম ও সেক্টর এ্যাডজুটেন্ড ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম। কুমিল্লা থেকে সিগন্যাল বিভাগের মেজর বাহার চট্টগ্রাম এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ক্যাপ্টেন রফিককে জানিয়ে দিলেন যে এফ.এফ. রেজিমেন্ট চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হচেছ। খবর পেয়ে পাকবাহিনীকে বাধা দেবার জন্য ক্যাপ্টেন রফিক নায়েক সুবেদার মুসাকে এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে হালিশহর থেকে শুভপুরের দিকে রওয়ানা হতে নির্দেশ দিলেন।
ফেনীর কাছাকাছি এসে শাহপুর খানের বাহিনী থেমে যেতে বাধ্য হয়, কারণ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা ইতিমধ্যেই ঢাকা ট্রাঙ্করোডের শুভপুর সেতুটি উড়িয়ে দিয়েছে। মেজর জেনারেল খাদিম রাজা ২৫শে মার্চ রাত ১২টা ১৫ মিনিটেই ঢাকায় বসে কুমিল্লা সেনাদলের পথরোধের খবর শুনলেন। ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফিকে তিনি পুলটির দখল ছেড়ে দিয়ে পাশের গিরিখাদ পার হয়ে চট্টগ্রাম শহরের দিকে এগিয়ে যাবার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু শুভপুর সেতু দখল না করে ইকবাল শফি চট্টগ্রামের যাবার পথ করে নিতে সক্ষম হলেন না। ই.পি.আর.বাহিনীর সদস্যদের প্রতিরোধের কারণে শুভপুর সেতুর দখল নিতে পাকিস্তানী সৈন্যদের ২৬শে মার্চ সকাল দশটা পর্যন্ত লেগে যায়। অতঃপর সেনাদলটি চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।
পাকবাহিনী শুভপুর সেতু অতিক্রম করে বিনা বাধায় তীব্র গতিতে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে – এই খবর শুনে রামগড় থেকে ই.পি.আর. বাহিনীর কিছু সৈন্য চট্টগ্রাম থেকে কুড়ি কিলোমিটার দুরে কুমিরা গ্রামে এসে তাদেরকে বাধা দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া ক্যাপ্টেন রফিকের পরামর্শে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের হোল্ডিং কোম্পানির অধিনায়ক ক্যাপ্টেন এম.এস.এ. ভূঁইয়া ১০২ জন সৈন্য নিয়ে কুমিরার দিকে অগ্রসর হন। কুমিরা পৌঁছেই ক্যাপ্টেন ভূঁইয়া সমগ্র ই.পি.আর. বাহিনীকে সঙ্ঘবন্ধ করে তাদের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করলেন। শত্রুকে বাধা দেওয়ার জন্য কুমিরা খুবই উপযুক্ত স্থান বলে মনে হলো তাঁর। এর কারণ, কুমিরা গ্রামের পূর্বদিকে রয়েছে চন্দ্রনাথ পর্বতমালা এবং পশ্চিম দিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। পাহাড় ও সাগরের মধ্যে দূরত্ব এক কিলোমিটারের বেশি নয়। সুতরাং শত্রুর ডান ও বাম দুই দিকেই প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং শত্রুকে চট্টগ্রামের দিকে এগুতে হলে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড ধরে এগোতেই হবে।
আধুনিক অস্ত্রে সজ্জ্বিত পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য ইপিআরদের সম্বল ছিল মাত্র ১টি এইচ.এম.জি., কয়েকটি এল.এম.জি আর বাকি সব রাইফেল। ক্যাপ্টেন ভূঁইয়া তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন যে এত অল্পসংখ্যক সৈন্য ও যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে পুরো একটি সুসংগঠিত ব্যাটেলিয়নের মোকাবেলা করার ঝুঁকি যে কি বিরাট এবং এর পরিণতি যে কত মারাত্মক হতে পারে তা তাঁরা তখনও উপলদ্ধি করতে পারেননি।
কুমিরা রেলওয়ে স্টেশনের অনতিদূরে এম.এন. পালের ব্রিকফিল্ডের সামান্য দক্ষিণে ঘোড়ামারা বা জোড় আমতলা। ঘোড়ামারা খালের পাড় থেকে পাঁচ-ছয় গজ সামনে পজিশন নেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। খালটিকে ক্যাপ্টেন ভূঁইয়া পেছনে রাখলেন এই ভেবে যে পাকবাহিনীর আক্রমণের মুখে পশ্চাদপসরণ যদি করতেই হয় তবে খালে নেমে পজিশন নেওয়া যাবে। ক্যাপ্টেন ভূঁইয়া (‘মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস’) সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন: “তিনজন প্লাটুন কমান্ডারকে ডেকে খুব সংক্ষেপে আমার পরিকল্পনার কথা জানালাম এবং নিজ নিজ স্থানে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পজিশন নেওয়ার নির্দেশ দিলাম। আমার নির্দেশ অনুযায়ী এইচ. এম জি.টাকে ডানপাশে পাহাড়ের ঢালুতে ফিট করা হলো। ই পি আর সুবেদার মুসা নিজে থাকলেন এই মেশিনগানটির দায়িত্বে। এই ভারী মেশিন গানটিই আমাদের প্রধান হাতিয়ার এবং সবচেয়ে বড় সম্বল। আমি রাস্তার বামদিকে কয়েকটি এল.এম.জি.-এর পজিশন ঠিক করে দিলাম। আমার নির্দেশমতো সবাই মাটিতে পজিশন নিয়ে নিল। পজিশন এর অবস্থা ছিল অনেকটা ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো। অর্থাৎ ডানে, বাঁয়ে এবং পেছনে আমাদের সৈন্য। যেদিক থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা এগিয়ে আসছে কেবল সেই সামনের দিকটা সাঁড়াশির হা এর মতো খোলা”।
এর পর অপেক্ষা, কখন শক্ররা এসে পৌঁছবে ব্যারিকেডের সামনে। সীতাকু- কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক হিরণ¥য় চক্রবর্তী তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন: “বিকেল সোয়া পাঁচটায় পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সৈন্যদের গাড়ির বহর এসে পৌঁছালো ছোট কুমিরায়। ছোট কুমিরার গুল আহমদ জুট মিলের গেটে এক বিহারী দারোয়ান তাদের সর্তক করে দিলো ‘দুশমন সামনে হ্যায়’। কথাটিকে খুব গুরুত্ব দিল না বোধ হয় গর্বিত বাহিনী। কিন্তু ছোট কুমিরা পুলের সামনে জির গাছের ব্যারিকেড সরাতে না পেরে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে শ’ খানেক সৈন্য রেল লাইন ধরে এবং বাকীরা ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড দিয়ে পদব্রজে দুই সারিতে দক্ষিণ দিকে এগোতে লাগল। কুমিরা বাজার এলাকায় ঢুকেই ‘ব্যানচোদ’ ইত্যাদি বলে গালি দিতে দিতে বিভিন্ন দোকানে টাঙানো কালো পতাকা ও বাংলাদেশী পতাকা ছিঁড়ে ফেলতে লাগলো। সবার কাঁধে অত্যাধুনিক অস্ত্র।”
সন্ধ্যা যখন সোয়া সাতটা তখন পাকবাহিনীকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে দেখলো বাঙ্কারে থাকা ই.পি.আর. সৈন্যরা। সুবেদার মুসা ডান দিকের পাহাড় থেকে ভারী মেশিনগানটি দিয়ে তাদের উপর চার্জ করলেন। ক্যাপ্টেন ভূঁইয়া তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন: ‘শুরু হলো শক্র নিধন পালা’। চারদিকে থেকে কেবল গুলির আওয়াজই শুধু শোনা যাচ্ছে। ভারী মেশিনগানটি থেকে ট্রেসার বের হতে শুরু করলো। আকস্মিক আক্রমণে পাকসৈন্যরা দিশেহারা হয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। পুরো ব্যাটেলিয়ান অন্তত কিছুক্ষণের জন্যে পিছু হটতে বাধ্য হয়। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই এফ.এফ. রেজিমেন্ট প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে ই. পি. আর. বাহিনীর উপর মেশিনগান, মর্টার ও আর্টিলারী থেকে অবিশ্রান্ত গোলাবর্ষণ করতে শুরু করে। হিরণ¥য় চক্রবর্তী তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন: রেল লাইন দিয়ে অগ্রসরমান পাক সৈন্যরা দ্রুত পাহাড়ের উপর টি বি স্যানাটোরিয়ামে উঠে পড়লো এবং পাল্টা আক্রমণ শুরু করলো। হঠাৎ আক্রমণে রাস্তায় জনা বিশেক পাক সৈন্য মারা পড়েছিল এবং বাকিরা ক্রলিং দিয়ে পাহাড়ে উঠে গিয়েছিল।”
যুদ্ধ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে স্বাভাবিক ভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদের স্বল্পতা দেখা দিল। অগ্রবর্তী স্থান থেকে এ্যামুনিশন সরবরাহের জন্য তাগিদ আসতে লাগলো বার বার। অনেক চেষ্টা করেও এ্যামুনিশন সংগ্রহ করতে না পেরে ক্যাপ্টেন ভূঁইয়া এ্যামুনিশন সংগ্রহের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম শহরের দিকে রওয়ানা হন। প্রতিকূল অবস্থার কারণে তিনি আর কুমিরায় ফিরে এসে ই.পি.আর. সৈনিকদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেননি। এভাবে কুমিরা রণাঙ্গন সারা রাত অফিসারশূন্য থাকে। ই.পি.আর. সৈনিকেরা তীব্রভাবে জনশক্তি ও গোলাবারুদের অপ্রতুলতা এবং উপযুক্ত অফিসারের অভাবে অনুভব করতে থাকে। তবুও অটুট মনোবল নিয়ে তাঁরা তাঁদের পজিশন আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেন। রফিকুল ইসলাম লিখেছেন: “শত্রুপক্ষের পিছনের অংশ যারা আমাদের অস্ত্রের আওতায় বাইরে ছিল তারা সঙ্গে সঙ্গেই সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করেছিল। এক ঘন্টারও বেশি সময় এই গুলি বিনিময় চললো। ইতিমধ্যে পাকিস্তানিদের মর্টার বহর শুভপুর সেতু অতিক্রম করে তাদের অগ্রবর্তী দলের সঙ্গে যোগ দিলো। এই সময় আমাদের সেনারা প্রায় তিন মাইল সরে এসে পরবর্তী অবস্থানের প্রস্তুতি গ্রহণ করলো। এই ভয়াবহ সংঘর্ষে ইপিআর এর পাঁচ জন সৈন্য গুরুতরভাবে আহত হয়।”
টিক্কা খানের জনসংযোগ অফিসার সিদ্দিক সালিক তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন যে সেদিন সন্ধ্যার আক্রমণে পাকবাহিনীর এগারো জন হতাহত হয়, নিহত হয় কোম্পানীর কমান্ডিং অফিসার। কিন্তু লেঃ কর্ণেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরীর লেখায় আছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানিয়েছেন যে দুই ঘন্টার এই সংঘর্ষে সেদিন সন্ধ্যায় ২০০ জনের মতো পাকসেনা নিহত হয় এবং ৩টিরও বেশি গাড়ি ধ্বংস হয়। ক্যাপ্টেন ভুঁইয়া লিখেছেন যে ২৬ তারিখ সন্ধ্যায় শত্রুবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার, লেঃ কর্ণেল ও একজন লেফটেন্যান্ট সহ ১৫২ জন সাধারণ সৈনিক প্রাণ হারায়। ই পি আর পক্ষেও ১৪ জন বীর সৈনিক শহীদ হন। রফিকুল ইসলাম লিখেছেন: “লাইট মেশিনগানের ঝাঁক ঝাঁক গুলির শিকার হয়েছিলেন ২৪ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার শাহপুর খানসহ প্রায় ৭০ জন পাকসেনা। আহত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যাও ছিল প্রচুর। ব্রিগেডিয়ার ইকবার শফি জীবন বাঁচাবার জন্যে তখন প্রাণপণে ছুটছিলেন পাহাড়ের দিকে। কয়েক জন সঙ্গীও তাঁকে অনুসরণ করলো। ভীত সন্ত্রস্ত সৈনিকেরা হাতিয়ার, যানবাহন ও অন্যান্য জিনিষপত্র ফেলেই প্রাণপণে ছুটছিল।”
এই আক্রমণের ফলে কুমিল্লার ব্রিগেড সদর দফতর ও ঢাকার ডিভিশনার সদর দফতরের সাথে এফ.এফ. ব্যাটেলিয়নের ২৪নং ব্যাটালিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে রফিকুল ইসলাম লিখেছেন: “এই অ্যামবুশের পরেই আমরা একটি অয়ারলেস বার্তা শুনে ফেলি। চট্টগ্রামের জনৈক কমান্ডার ঢাকায় ৯৪ ডিভিশনের কর্ণেল স্টাফ হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে বলছিলেন। তিনি বলছিলেন, আমাদের অনেক লোক হতাহত হয়েছে। সীতাকুন্ডের দক্ষিণে বাকী সৈন্যরা আটকা পড়া আছে। বিমানে সৈন্য পাঠানোর অনুরোধ করছি। জরুরী ভিত্তিতে বিমানে করে হতাহতদের সরাবার ব্যবস্থা করা দরকার।”
ঢাকায় জেনারেল অফিসার ইন কমান্ড (জি.ও.সি.) টিক্কা খান হারিয়ে যাওয়া সেনাদলটি সম্পর্কে উদ্বিঘœ বোধ করলেন এবং নিজেই তাদের খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সিদ্দিক সালিক লিখেছেন: “২৭শে মার্চ সকালে জি.ও.সি. একটি হেলিকপ্টার নিয়ে বের হলেন। হেলিকপ্টারটি চালাচ্ছিল মেজর লিয়াকত বোখারি এবং তাকে সাহায্য করছিলেন মেজর পিটার। চট্টগ্রামে অবস্থানরত ২০ বালুচ রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফাতেমির সঙ্গে দেখা করে তিনি কুমিল্লার দিকে রওয়ানা হলেন এফ.এফ. রেজিমেন্টের খোঁজে। ঘন মেঘ থাকায় জি ও সি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। কুমিল্লার প্রায় কাছাকাছি এসে জি. ও. সি. নিজের হাঁটুর উপর ছোট্ট একটা ম্যাপ মেলে ধরে বাইরের দিকে তাকালেন এবং পাইলটকে মেঘ ভেদে করে নীচে নামতে নির্দেশ দিলেন। হেলিকপ্টারটি নীচে নামাতেই টিক্কা খান জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে দেন হারিয়ে যাওয়া সেনাদলের খোঁজে। সঙ্গে সঙ্গে এক ঝাঁকগুলি ভুমি থেকে লাফিয়ে উঠলো। পাইলট বোখারি এবং তাঁর সহকারী মেজার পিটার মুহুর্তে হেলিকপ্টারকে উপরে উঠিয়ে নিলেন। তথাপি হেলিকপ্টারটির মেশিনে গুলি লাগে। একটি গুলি আঘাত হানলো লেজে। অপরটি তেলের ট্যাংকি থেকে কয়েক ইঞ্চি দুরে গিয়ে কপ্টারের গেট বিদ্ধ করে। মেজর বোখারির ইচ্ছা ছিল আরও কিছুক্ষণ চেষ্টা করার। কিন্তু টিক্কা খান পাইলটকে ঢাকা ফিরে যাবার নির্দেশ দিলেন। টিক্কা খানের মিশন ব্যর্থ হলো। যোগাযোগ বিছিন্ন হওয়া সেনাদলের কোন খোঁজ মিললো না।”
ইতিমধ্যে জেনারেল মিঠঠাও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সেনাদলের সাথে সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে ই.এক্স.-৩ নামক কমান্ডো ব্যাটেলিয়নকে ঢাকা থেকে আকাশপথে চট্টগ্রামে পাঠালেন। কমান্ডো সেনারা এফ. এফ. ব্যাটালিয়ন বা ই. পি. আর. বাহিনীর অবস্থানের খবরাখবর সম্পর্কে কিছুই জানতো না। এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে মুসকিল আসান হয়ে দেখা দিলেন এক অতি উৎসাহী বাঙালি অফিসার ক্যাপ্টেন হামিদ। তিনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় ছুটিতে এসেছিলেন। ক্যাপ্টেন হামিদ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বললেন: ‘আমি এলাকাটি চিনি। গাইড হয়ে কি আমি তোমাদের সাথে যেতে পারি।” ক্যাপ্টেন হামিদকে সাথে নেয়া হলো।
এদিকে চট্টগ্রাম থেকে ২০ বালুচ রেজিমেন্টের একটি সেনাদলকেও পাঠানো হলো কুমিরার দিকে। এই তিনটি সেনাদল অর্থাৎ এফ. এফ. ব্যাটেলিয়ন, ই.এক্স-৩ কমান্ডো সেনাদল আর বালুচ রেজিমেন্টের সেনাদলটির সংযুক্তির উপর সম্পূর্ণ অপারেশনটির সাফল্য নির্ভর করছিল। ২০ নং বালুচ রেজিমেন্টের সেনারা কুমিরার দিকে এগোতে না এগোতেই ই. পি. আর. সৈনিকদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। কমান্ডোরা ক্যাপ্টেন হামিদকে সাথে নিয়ে তাদের লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হয়ে বেশিদুর এগোনোর আগেই রাস্তার দুই দিক থেকে দ্বিমুখী গুলিবর্ষণের মুখোমুখি হয়েছিল। কমান্ডোদের মধ্যে মোট মারা গিয়েছিল ১৩ জন। এর মধ্যে কমান্ডিং অফিসার সহ ছিল ২ জন তরুণ অফিসার, ১ জন জুনিয়র কমিশনড অফিসার এবং ৯ জন ছিল অন্যান্য পদের। এটা অবশ্য ঢাকায় অবস্থানরত সিদ্দিক সালিকের সরকারী ভাষ্য। মৃতের সংখ্যা কম বা বেশি হওয়া অসম্ভব নয়।
২৭মে মার্চ তারিখে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন হিরম্ময় চক্রবতী তাঁর স্মৃতিকথায়। “(কুমিরা) সমুদ্র উপকুলে একট টার্মিনাল ভবন ছিল। কয়েকজন ই. পি. আর. সৈন্য সেই টার্মিনাল ভবনে উঠে পাহাড়ে অবস্থিত পাকসৈন্যদের উপর গুলি চালায়। ব্যাপারটা টের পেয়ে পাক সৈন্যদের কমান্ডার কর্ণেল শাপুর (শাহপুর?) খান ৩০/৪০ জন সৈন্য নিয়ে কোর্টপাড়ার ভিতরে দিয়ে গিয়ে টার্মিনাল ভবনটি ঘিরে ফেরে। টার্মিনাল ভবন থেকে দুই জন ই.পি.আর. সৈন্য অত্যন্ত কাছ থেকে গুলি করলো তাদের। মারা গেল কর্নেল শাপুর খান, মেজর লালদাদ খান ও অন্য এক জন। প্রতিআক্রমণ করলো পাকসৈন্যদের বাকি সদস্যরা। এই দুই ই.পি.আর. সৈন্যদের একজন আহত অবস্থায় লাফ দিয়ে জোয়ারের পানিতে ডুব দিয়ে পালিয়ে যায়। অন্য একজনকে ভবনের পানির ট্যাংক থেকে বের করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে পানিতে ফেলে দিল পাক সৈন্যরা। এর পর নিজেদের লাশ তিনটিকে বয়ে এসে টি. বি. স্যানাটারিয়ামের পাশে কবর দিল তারা।”
কুমিরার সংঘর্ষের পর কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ব্রিগেডিয়ার ইকবার শফি নিজেই সেনাদলের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন। তিনি কিছু মর্টার চেয়ে পাঠালেন। ২৭শে মার্চ সেগুলো পৌঁছে গেল এবং ২৮শে মার্চ ভোরে তিনি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন। আক্রমণ সফল হলো এবং ই. পি. আর. সৈনিকদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের রাস্তা পরিষ্কার হয়ে গেল। হিরম্ময় চক্রবর্তীর স্মৃতিচারণ: “২৮শে মার্চ সকালে পাক সৈন্যরা বাঙালি মারতে মারতে চট্টগ্রাম অভিমুখে রওনা হয়। বার আউলিয়া মাজারের উত্তরে মাউধ্যার হাটে ছিল এক বটগাছ। সে গাছে যে একজন সংশপ্তক বাঙালি সৈন্য ওত পেতে ছিল এটা কেউ জানতো না। পাকসৈন্য এগিয়ে আসতেই সে ১২/১৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে। পরে পাক সৈন্যের গুলিতে সেও নিহত হয়। এর পর পাকসৈন্যরা ক্ষেপে গিয়ে পাশের দুটো চা দোকানের ভিতরে সাত জন বাঙালীকে শিকল দিয়ে বেঁধে দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়। বার আউলিয়া মাজারে আশ্রয়গ্রহণকারী কাউকে তারা না মারলেও সামনের দোকান থেকে যারা ভয়ে পালাছিল তাদের গুলি করে হত্যা করে। ২৮শে মার্চ দুপুরে বার আউলিয়া গিয়ে আমি রাস্তার উপর সাতাশটা বাঙালীর লাশ গুনেছি। উক্ত দুটি দোকানে শেকলবাধা অবস্থায় পড়ে যাওয়া বীভৎস সাতটি মৃতদেহের যে দৃশ্য সেদিন দেখেছিলাম তা এখনও চোখে ভাসছে।”
রফিকুল ইসলাম মনে করেন, কুমিরায় ই.পি.আর. সেনাদের উপরোক্ত অ্যামবুশ ছিল আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে পাকবাহিনীর উপর প্রথম সরাসরি আক্রমণ। তিনি আরও বলেন, কুমিরার ঘটনার গুরুত্ব এতই সুদুরপ্রবাসী ছিল যে, এই ঘটনা পাকিস্তানী সৈন্যদের চট্টগ্রামে অবাধে কিছু করার মুল পরিকল্পনা ব্যহত করে দেয়। বাংলাদেশের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে কুমিরার যুদ্ধের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে, কারণ এখানেই পাকিস্তানী বাহিনী সর্বপ্রথম পরিকল্পিত প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়।
শিশির ভট্টাচার্য্য, অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
http://buyzithromaxinf.com/ – Zithromax
https://prednisonebuyon.com/ – Prednisone
Impotencia Propecia
Propecia
buy stromectol 12mg
Online Pyridium Mail Order Glendale
cialis perdida vision
azithromycin 250mg tablets
100mg Cialis Tadalafil
Priligy Precio
achat levitra en fr
Cialis Fast kamagra eu Baclofene 10 Mg
Mice were housed on a 12 hour light dark cycle in the Unit for Laboratory Animal Medicine at the University of Michigan ULAM and fed ad libitum either a chow diet 9 fat in calories; TestDiet or a HFD 60 fat in calories; Research Diets prescriptions for propecia in nj