Scroll Top
19th Ave New York, NY 95822, USA

ব-এ বিন্দু নাকি ব-এ শূন্য?

Capture

এতদিন পর্যন্ত অঞ্চলভেদে কয়েকটি বাংলা বর্ণের একাধিক নাম ছিল: ‘ঙ’ (উঅঁ বা উমো), ‘ঞ’ (ইঁঅ বা নিয়), ‘য়’ (অন্তস্থ অ বা অন্তস্থ ইয়), ‘র’ (ব-য়ে বিন্দু ‘র’ বা ব-য়ে শূন্য ‘র’) ইত্যাদি। অচিরেই এই নামবৈচিত্রের অবসান হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারী সংস্থার সহায়তা ও সম্মতি নিয়ে সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলা স্বর ও ব্যঞ্জনবর্ণের প্রমিত উচ্চারণের একটি শ্রুতি-সহায়ক উপকরণ তৈরি করেছে। এই উপকরণটি দিয়ে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রমিত উচ্চারণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিটি বর্ণের একটি মাত্র প্রমিত উচ্চারণে অভ্যস্ত করতে পারেন।

এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য যদি হয় শিশুদের প্রমিত উচ্চারণে দক্ষ করে তোলা, তবে উদ্যোগটির গোড়ায় গলদ আছে। যাকে বর্ণের উচ্চারণ বলে মনে করা হচ্ছে, সেটি আসলে বর্ণটির নাম। একই বর্ণের ভিন্ন ভিন্ন নাম থাকে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায়। ইংরেজিতে যে বর্ণটির নাম ‘আই’, ফরাসিতে সেই বর্ণটির নাম ‘ই’। ইংরেজি ‘ও’ বর্ণটির একাধিক উচ্চারণ আছে: ১) nice, ২) fit, ৩) flirt এবং ৪) dirt। বাংলায় ‘অ’ বর্ণের আছে কমপক্ষে দুটি উচ্চারণ: অ: অলস, ও: অসীম। ‘অ’ বর্ণের এই দুই উচ্চারণের একটিও নেই হিন্দিতে। এর মানে হচ্ছে, বর্ণের উচ্চারণ হয় না, হয় শব্দের বা শব্দবন্ধের।

কোনো বর্ণ মনে রাখার জন্যে শিশু যদি সেই বর্ণকে বিশেষ নামে ডাকে এবং সেই নাম যদি লিখন-শিক্ষণ ঐতিহ্যের অংশ হয় তবে তাতে সমস্যা কী? বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলে যদি ‘কাঁধে বোঝা ঞ’, ‘হাঁটুভাঙ্গা দ’, ‘পালতোলা প’… ইত্যাদি নাম থাকে তবে কোন ভাষাতাত্ত্বিক বা শিশুমনস্তাত্ত্বিক কারণে সেইসব নাম ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করতে হবে? আগে শিশুরা ং বর্ণটিকে ‘অনুস্বার’ বলতো (ফরিদপুর অঞ্চলে নাকি ‘অনুস্বির’ বলা হতো, চট্টগ্রামে বলা হতো ‘অনুষ্কার’) এখন থেকে বলতে হবে ‘অনুস্বর’, কারণ কোনো এক অভিধানে নাকি এ নামটি আগে আছে! ‘স্বরে অ’, ‘স্বরে আ’, ‘পেট কাটা মূর্ধণ্য ষ’, ‘ব-এ শূন্য র’ বলা নাকি গ্রাম্যতা। দুই প্রচলিত রীতির মধ্যে একটিকে ‘গ্রাম্য’ বলার সিদ্ধান্ত আগাপাশতলা সাবজেক্টিভ, শুদ্ধবাদী ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক।

সংস্থাটির মূল লক্ষ্য সম্ভবত সারা দেশের প্রারম্ভিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রমিত উচ্চারণে দক্ষ করে তোলা। তাই যদি হয়, তবে এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন-যোগ্যতা এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। জন্মের কিছুক্ষণ পরই শিশুর শ্রবণযন্ত্রের কাজ শুরু হয় এবং মস্তিষ্কের ধ্বনিতাত্ত্বিক উপাঙ্গ সক্রিয় হয়ে উঠে। শিশু উচ্চারণ শেখে শ্রেফ আশেপাশের লোকজনের কথা শুনে শুনে। যেহেতু বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিশুর আশেপাশের লোকজনের উচ্চারণ প্রমিত নয় সেহেতু বেশির ভাগ শিশুর উচ্চারণও প্রমিত না হওয়ারই কথা।

শিশুর ধ্বনিতাত্ত্বিক কাঠামো একবার গঠিত হয়ে গেলে বিশেষ বয়সের পর হাজার প্রশিক্ষণ দিলেও সে কাঠামোর খুব বেশি পরিবর্তন করা যায় না। কোনো যাদুবলে সমাজের সব স্তরের লোক যদি শুদ্ধ উচ্চারণে অভ্যস্ত হয়েই যায়, তবে উপভাষাগুলোর ধ্বনিতত্ত্ব বদলে যাবে। শিশুরা আর ‘শুদ্ধ’ উচ্চারণে উপভাষা বলতে পারবে না। প্রমিত ভাষার চাপে উপভাষাগুলো একদিন হারিয়েই যাবে। চট্টগ্রামের শহরাঞ্চলের স্কুলগামী শিশুদের অনেকেই এখন চট্টগ্রামি ভাষা বলতে পারে না। উপভাষাগুলোর অস্তিত্ব-সঙ্কট সৃষ্টি করা হলে আখেরে প্রমিত ভাষাই বিপদে পড়বে, কারণ প্রতিটি উপভাষা হচ্ছে প্রমিত ভাষার এক একটি পশ্চাৎভূমি।

উপভাষার প্রভাবে প্রমিত ভাষার উচ্চারণ-বিকৃতি স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া এবং বাংলা ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তনের জন্যে এই বিকৃতি অপরিহার্য। রোমান সা¤্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিকৃত উচ্চারণে ল্যাটিন বলা হতো বলে ফরাসি, স্পেনিশ, ইতালিয়ান ইত্যাদি ভাষার উদ্ভব হয়েছে। উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন উচ্চারণে সংস্কৃত/প্রাকৃত বলার রীতি বাংলা, হিন্দি, মারাঠি ইত্যাদি ভাষার গঠন ও বিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। দেশের সব শিশুকে একই প্রমিত উচ্চারণ করতে বাধ্য করা বাংলা ভাষার বৈচিত্র্য-বিনাশী একটি সিদ্ধান্ত। অনুরূপ একটি অপরিণামদর্শী সরকারী সিদ্ধান্তের কারণে ফ্রান্সে বহু উপভাষার মৃত্যু হয়েছিল, যেগুলোকে এখন লক্ষ লক্ষ ইওরো ব্যয় করেও পুনরুজ্জীবিত করা যাচ্ছে না।

মানুষ যখন দ্বিতীয় ভাষা ব্যবহার করে তখন তার উচ্চারণের গ্রহণযোগ্যতা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়, কারণ প্রথম অর্জিত ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব¡ দ্বিতীয় ভাষার ধ্বনিতত্ত্বকে প্রভাবিত করে। প্রমিত উচ্চারণ শেখা অনেকটা সার্কাসের খেলা শেখার মতো। বিশেষ ব্যক্তি সযতেœ অভ্যাস করে কোনো বিশেষ খেলা বা বিশেষ উচ্চারণ রপ্ত করতে পারে। কিন্তু কোনো গোষ্ঠীর সব সদস্যের পক্ষে এটা করা সম্ভব হয়েছে, ভাষার ইতিহাসে তেমন নজির নেই।

প্রমিত উচ্চারণ শিখলে বেতার-টিভিতে ঘোষকের কাজ পেতে সুবিধা হয় (যদিও বাংলাদেশের দৃশ্য ও শ্রাব্য মিডিয়ায় অপ্রমিত উচ্চারণের ছড়াছড়ি!)। কোনো ব্যক্তির উচ্চারণে আঞ্চলিকতা থাকলে আড়ালে তাকে নিয়ে হাসাহাসি হয়। কিন্তু প্রমিত উচ্চারণ অপরিহার্য কোনো ভাষিক যোগ্যতা নয়। রাষ্ট্রপিতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রমিত উচ্চারণে ৭ই মার্চের ভাষণ দেননি। তিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট: বুশ, ক্লিনটন আর ওবামার উচ্চারণরীতি যদি আলাদা হয়ে থাকে, তবে এদের মধ্যে কোনো একজন নিশ্চয়ই প্রমিত উচ্চারণ করছেন না।

শুদ্ধতার মানদ- কালের প্রবাহে বদলায়, ভৌগোলিকভাবেও বদলায়। আজ যে বাংলা উচ্চারণ প্রমিত এক শ বছর পরে সেই উচ্চারণ তামাদি হয়ে যাবে। চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন আর মঙ্গলকাব্যের যুগের বাংলা উচ্চারণ কি এক ছিল? এমন অনেক বাংলা শব্দ আছে যেগুলোর উচ্চারণ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রমিত উচ্চারণ অভিধানে এক নয়। বাংলাদেশের একজন আবৃত্তিশিল্পী ও পশ্চিমবঙ্গের একজন আবৃত্তি-শিল্পীর উচ্চারণ এক নাও হতে পারে। কানাডার কুইবেকে যা প্রমিত ফরাসি উচ্চারণ, ফ্রান্সে তা আঞ্চলিক উচ্চারণ। ইংরেজির একাধিক প্রমিত উচ্চারণ রয়েছে ইংল্যান্ডে, আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়ায়।

অভিযোগ করা হয়ে থাকে, প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা শ্রেণীকক্ষে প্রমিত উচ্চারণে পাঠদান না করার কারণে প্রমিত উচ্চারণ প্রচলন প্রক্রিয়া ব্যহত হচ্ছে। পৃথিবীর বহু উন্নত দেশের শ্রেণীকক্ষে আঞ্চলিক উচ্চারণ রীতি ব্যবহৃত হয়। জাপানের ওসাকার শিক্ষকেরা পাঠদানের সময় টোকিওতে প্রচলিত প্রমিত কান্তো উচ্চারণের পরিবর্তে তাদের নিজস্ব কানসাই উচ্চারণ ব্যবহার করেন। কানাডার কুইবেকের শিক্ষায়তনগুলোতে কুইবেকের আঞ্চলিক ফরাসি উচ্চারণে পড়ানো হয়।

শিশুদের সামনে তথাকথিত প্রমিত উচ্চারণের একটা নমুনা রাখা যেতেই পারে, যদিও বেতার-টিভির কারণে সে নমুনা শিশুদের কাছে একেবারে অপরিচিত নয়। তবে শিশুদের শেখাতে হবে বর্ণের নয়, শব্দের উচ্চারণ। প্রাথমিক শ্রেণীগুলোতে ব্যবহৃত বইগুলোর প্রতিটি পাঠের প্রমিত উচ্চারণ প্রত্যেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রেও অনুরূপ প্রকল্প হাতে নিলে ভালো হয়, কারণ বাংলা ও ইংরেজিÑ এই উভয় ভাষায় দক্ষতা বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্যে অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিশির ভট্টাচার্য্য, অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Comments (17)

Your writing is complicated. Just clear it drawing a conclusion whether students should be taught standardized Bangla or not in one sentence. We need one decision.

Yes, they should be taught standardised Bengali pronunciation.

Yes, they should be taught standardised Bengali pronunciation.

What’s up, after reading this remarkable paragraph i am too cheerful to share my experience here with friends.

buy cheap kamagra uk kamagra newcastle kamagra australia mastrcard

Plaquenil Jctjuf Buy Amoxicillin Online Uk

cLP, SI LP and cecum LP leukocytes were isolated using a published method Grohnke et al propecia timeline While on chloroquine she developed extensive classic vitiligo

Leave a comment