Scroll Top
19th Ave New York, NY 95822, USA

বাংলা কি আদৌ বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা

Shaheed_minar_Roehl
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই! দুঃখের বিষয়, ভাষা আন্দোলনের সাড়ে ছয় দশক পরেও বাঙালির এই প্রাণের দাবি শুধু কাগজে-কলমে পূরণ হয়েছে। বাংলা এখনও কার্যত বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষানয়। কোনো ভাষা রাষ্ট্রভাষা হয়ে উঠতে হলে ভাষাটিকে সর্বস্তরের প্রধানত শিক্ষা, প্রশাসন, আদালত ও ব্যবসায়সমাজজীবনের এই চতুরঙ্গের একমাত্র (হ্যাঁ, একমাত্র!) ভাষা হয়ে উঠতে হবে। ফ্রান্স, জার্মানি বা জাপানে যথাক্রমে ফরাসি, জার্মান ও জাপানি ভাষা উপরোক্ত চতুরঙ্গের একমাত্র ভাষা। এসব দেশে ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষার অধিকার একচেটিয়া। দ্বিতীয় কোনো ভাষাকে সেখানে রাষ্ট্রভাষার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে দেওয়া হয় না।

রাষ্ট্রভাষার দাবির সঙ্গে শুধু রক্ত নয়, কিছু যুক্তি আর জাতীয় স্বার্থও মিশ্রিত ছিল। বাংলা রাষ্ট্রভাষা হওয়া বা না হওয়ার উপর বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির অস্তিত্ব ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে। বাংলা যদি শিক্ষার একমাত্র মাধ্যম না হয়, তবে কোটি কোটি বাংলাভাষীকে শতভাগ শিক্ষিত করে তোলা যাবে না। কোনো অর্ধশিক্ষিত বা মূর্খ জনগোষ্ঠীর পক্ষে উন্নত জাতি গঠন করা সম্ভব নয়। শিক্ষার একাধিক মাধ্যম থাকলে (যেমন, বাংলা ও ইংরেজি) জাতির শিক্ষিত অংশের মধ্যে বৈষম্য এবং কালক্রমে বিভক্তি সৃষ্টি হওয়া অবশ্যম্ভাবী, যা রাষ্ট্রজাতিগঠনে সহায়ক নয়।

বাংলাদেশে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ইংরেজিকে শিক্ষার বিকল্প মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে ইচ্ছুক। বাংলাদেশ সরকার নিজেও সরকারি স্কুল-কলেজে ইংলিশ মিডিয়াম খুলেছে। এনসিটিবি ইংরেজি ভাষায় পাঠ্যবই সরবরাহ করছে। কয়েক হাজার বাংলাভাষীকে হয়তো শুদ্ধ ইংরেজি বলতে সক্ষম করে তোলা যাবে, কিন্তু কোটি কোটি বাংলাভাষীকে কখনই কাজ চালানোর মতো ইংরেজি-শিক্ষিত করে তোলা যাবে না। বহু কোটি অর্থ ব্যয় করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে শিক্ষক নিয়ে এসেও চীন ও জাপানে ইংরেজির প্রসার নিশ্চিত করা যায়নি। জাতীয় স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ইংরেজি মাধ্যমের দিবাস্বপ্ন দেখা নেহায়েতই জনগণ ও সরকারের সময় ও অর্থের অপচয়।
 
বিচারপ্রার্থীদের ভাষা যেহেতু বাংলা, সেহেতু বিচারকার্য ভিন্ন ভাষায় সম্পাদিত হওয়ার কোনো যুক্তি নেই। বিচার-প্রার্থী এবং বিচার-কর্তাএই দুজনের ভাষা যদি এক না হয়, তবে সুবিচার নিশ্চিত করা মুশকিল। সুবিচারের অভাব সমাজে অস্থিরতার সৃষ্টি করে। অস্থির সমাজ জাতিগঠনে সহায়ক হয় না।
পাবলিক সার্ভিস কমিশন। পাবলিককে সার্ভিস দে্ওয়াই যদি জন্যে নিয়োগের শর্ত হয়ে থাকে, তবে জনগণ প্রভু এবং প্রশাসনের কর্তারা সেবক। সেবকদের উচিত প্রভুর ভাষা বাংলা রপ্ত করা। যুগে যুগে, দেশে দেশে, সেবকেরা প্রভুর ভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে, প্রভুকে খুব কম ক্ষেত্রেই সেবকের ভাষা শিখতে হয়েছে। প্রভুর ভাষা বলেই তো বাঙালিরা ইংরেজি শিখেছে।
 
পণ্যের নাম, ব্যবহারবিধি, ব্যবসায়ের চুক্তিপত্র বাধ্যতামূলকভাবে বাংলা ভাষায় লিখিত হতে হবে। এসব বাধ্যবাধকতা ভঙ্গ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ব্যবসায়ের একটি পক্ষ যদি বিদেশি বা ভিন্নভাষী হয় তবে সে ক্ষেত্রেই শুধু চুক্তিপত্র বা ব্যবহারবিধি ইংরেজি বা সংশ্লিষ্ট ভাষায় রচিত হতে পারে।
আমলা, বিচারক ও শিক্ষকসহ সরকারি ও বেসরকারি যে কোনো নিয়োগ ও পদোন্নতির অন্যতম শর্ত হতে হবে শুদ্ধ ব্যাকরণে ও শুদ্ধ বানানে বাংলা লেখার ক্ষমতা। ভুল ব্যাকরণে ও ভুল বানানে লেখার অপরাধ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট পদস্থ ব্যক্তিকে (অর্থ)দণ্ডের বিধান থাকবে।
 
যে কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড বাংলায় লিখিত হতে হবে। বাংলার সাথে ইংরেজি থাকতে পারে, তবে ইংরেজি হরফের আকার বাংলার তুলনায় ক্ষুদ্রতর ও কম উজ্জ্বল হবে। এর অন্যথা হলে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রথমে সতর্কতামূলক অর্থদণ্ড এবং এর পরেও ভুল সংশোধিত না হলে মোটা রকম অর্থদণ্ড দিতে হবে।
এর মানে অবশ্যই এই নয় যে, শিক্ষা ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাকে অবহেলা করতে হবে। ইংরেজি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা এবং ঔপনিবেশিক কারণে বাংলাদেশের অন্যতম ভাষিক উত্তরাধিকারও বটে। বিশ্বের সংস্কৃতি ও জ্ঞানসাগরের সাথে আমাদের নাড়ির বন্ধন ঘটাবে ইংরেজি ভাষা। প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে দুর্বল থাকার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। ইংরেজি শেখাতে হবে একটি ভাষা হিসেবে। কোনো একটি ভাষা শিক্ষার জন্যে ভাষাটিকে শিক্ষার মাধ্যম হতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই।
 
বিচিত্র ব্যবহারে ভাষার স্ফুর্তি। বাংলা যখন আসলেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষায় পরিণত হবে, অর্থাৎ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষা ও ব্যবসায় জগতের একমাত্র ভাষায় পরিণত হবে তখন এর শব্দকোষ ও প্রকাশক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। অবিরল ও সবর্জনীন ব্যবহারে বর্ষার বুড়িগঙ্গার মতো তথাকথিত দূষণমুক্ত হয়ে উঠবে বাংলা ভাষা। প্রমিত বাংলার বর্তমান রূপ হারিয়ে যাবার যে ভয় অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছে, সে ভয় অমূলক প্রমাণিত হবে।
গত শতকের আশির দশক থেকেই বাঙালি একটি অভিবাসন-প্রবণ জাতিতে পরিণত হয়েছে। মানব-সম্পদ উন্নয়নের অন্যতম উপায় ভাষাশিক্ষা। রপ্তানিযোগ্য মানবসম্পদের বাজার খুঁজে নিয়ে সেই সব অঞ্চলের ভাষাশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে রাষ্ট্র ও সমাজকে। কলেজ পর্যায় থেকেই আরবি, ফরাসি, জার্মান, চিনা, জাপানি ইত্যাদি ভাষা শেখানো যেতে পারে।
 
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা নিজ নিজ মাতৃভাষাতেই প্রাথমিক শিক্ষা পাওয়া উচিত। মাদ্রাসাগুলোকে কথ্য আরবি ভাষা শিক্ষার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের শিক্ষানীতিতে ভাষাশিক্ষা নিয়ে তেমন কিছুই বলা হয়নি। বাংলাদেশের একটি ভাষানীতি দরকার। একটি ভাষা আইন প্রণয়ন করাও আশু প্রয়োজন। কানাডার কুইবেকে ১৯৭৪ সাল থেকে ফরাসি ভাষা আইন প্রয়োগ করার ফলে ফরাসি ভাষা কুইবেকের সমাজজীবনের চতুরঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং কানাডার দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সমাজ ও জীবনের সর্বস্তরে রাষ্ট্রভাষা হিব্রুর ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করে ইসরায়েলে ইহুদিরা দুই হাজার বছর ধরে মৃত হিব্রু ভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছে।
 
কোনো জাতির মাতৃভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হলে সেই জাতির টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা না গেলে বাঙালি কখনই একটি মননশীল, সুখী ও সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হবে নাএ আশঙ্কা হয়তো অমূলক নয়।
 
 
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ তারিখে বিডিনিউস২৪এ প্রকাশিত

Related Posts

Comments (8)

Buy Accutane From Legal Chemist

What a data of un-ambiguity and preserveness of
precious experience regarding unpredicted emotions.

Kaneshiro MD MHA Clinical Assistant Professor of Pediatrics University of Washington School of Medicine Gsmvvm what is prednisone for Thus results for vertical banded gastroplasty were not included in the main analyses but are in the appendix.

Leave a comment