Scroll Top
19th Ave New York, NY 95822, USA

দুর্গাপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসা

pencil-eraser-erasing-text-from-paper

“নবাবপুর রোডের কাছেই লিয়াকত এভিনিউ নামে একটা রাস্তা ছিল না? সেটার কি হলো? নাকি জনসন রোডকেই লিয়াকত এভিনিউ বানানো হয়েছিল? এবং বাংলাদেশ হওয়ার পর জনসন রোড তার নাম ফেরত পেয়েছে? কামর সাহেব এসব একেবারেই পছন্দ করেন না। কলকাতায় এই সবই হচ্ছে। থিয়েটার রোড, ডালহাউসি স্কয়ার, ওয়েলেসলি স্ট্রিট, রেড রোড, এসব জায়গারই নাম নাকি বদলে ফেলা হয়েছে। ভ্যান্ডালিজম ছাড়া একে আর কি বলা যায়? ডালহাউসি স্কয়ার, রেড রোড, থিয়েটার রোড, ওয়েলেসলি স্ট্রিট ‒ এই সব নামের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক অনুসঙ্গ আছে, সেটাকে বাদ দিলে কলকাতা কি আর কলকাতা থাকে? কলকাতায় নাকি ব্রিটিশ আমলের স্ট্যাচুগুলো ভেঙে সেখানে সব ভারতীয় নেতাদের মূর্তি বসানো হয়েছে। এতে কি ভারতীয় নেতাদের গৌরব বেড়েছে? ইতিহাস মুছে ফেললে, বাকি থাকে কী? হককারিতার একটা সীমা থাকা উচিত। এখন শুধু ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের নাম পাল্টে ইন্দিরা মেমোরিয়াল করা। এর ফলে হচ্ছেটা কি? মাঝখান থেকে কলকাতা শহরটাই তার ঐতিহ্য আর আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছে। রাস্তার নাম বদলে ফেললে আর ব্রিটিশ রাজপুরুষদের জায়গায় ভারতীয় নেতাদের মূর্তি গড়লেই ইতিহাসের পাতা থেকে বৃটিশ শাসনের অধ্যায়গুলো মুছে যাবে?”
রশিদ করিমের উপন্যাস ‘মায়ের কাছে যাচ্ছি’ থেকে উদ্ধৃত। প্রথম প্রকাশ: ১৯৮৯। উদ্ধৃতির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে রশিদ করিমের উপন্যাস সমগ্র। প্রকাশক: সাহিত্যপ্রকাশ। পৃষ্ঠা: ৯২৭)

‘স্থান নাম প্রত্নভাষী’। কথাটার মানে হচ্ছে, স্থাননামের মধ্যে কোন বিশেষ দেশ বা সমাজের প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য লুকিয়ে থাকে। এই যেমন ধরুন, ঢাকার ‘উয়ারী’। প-িতদের মতে ‘উয়ারী’ কথাটার উৎপত্তি সংস্কৃত ‘উপকারীকা’ থেকে। উপকারীকা নাকি বৌদ্ধযুগের একটি প্রতিষ্ঠান। ঢাকা থেকে বৌদ্ধরা হারিয়ে গেছে হাজার বছর আগে। কিন্তু ‘উয়ারী’ নামটি আমাদের জানাচ্ছে যে তারা একদিন এখানে ছিল এবং আজকের হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে অনেকেরই পূর্বপুরুষ তারা। গত পঞ্চাশ বছরে এ নামটি পরিবর্তনের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর একটি কারণ হতে পারে এই যে নামপরিবর্তনে অতি উৎসাহী ব্যক্তির অভাব ছিল উয়ারীতে। অথবা এমনও হতে পারে যে ‘উয়ারী’ নামটিতে তেমন হিঁদু-হিঁদু গন্ধ নেই বলে নামটি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তেমনভাবে অনুভূত হয়নি।
রাজনৈতিক দিক থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কারণে-অকারণে স্থাননাম পরিবর্তন করে থাকেন। মোগল সম্রাটদের নাম বদলানোর বেশ বাতিক ছিল: এলাহাবাদ, ফতেপুর ঔরঙ্গাবাদ ইত্যাদি তার প্রমাণ। মোগলরা ঢাকার নাম দিয়েছিল ‘জাহাঙ্গীর নগর’। সে নামটি টেকেনি। পাকিস্তান আমলে ঢাকার অদূরে কয়েকটি গ্রামের দখল নিয়ে সেখানে স্থাপন করা হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। যে গ্রামগুলোর কবরের উপর এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সে গ্রামগুলোর জন্মগত হক ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের উপর। অন্ততপক্ষে আবাসিক হলগুলোর নামকরণ করা যেতে পারতো সে কয়েকটি গ্রামের কোন একটির নাম অনুসারে। কিন্তু স্থাননামের ইতিহাসরক্ষার কোন চিন্তাই আসেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্তাব্যক্তিদের মাথায়। তাঁরা জায়গাটির নূতন নাম দিলেন মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামে কারণ, রাষ্ট্রটি ছিল পাকিস্তান আর জাহাঙ্গীর ছিলেন মুসলমান। কিন্তু একজন অযোগ্য, সুরাপায়ী মোগল বাদশার জন্য আমরা বাঙালীদের এত দরদ কেন? তারাতো শুনেছি প্রায়ই আক্রমণ করতে আসতো বাঙালিদের বিদ্রোহী পূর্বপুরুষদের। মোগলদের আক্রমণ প্রতিহত করতেন যাঁরা, সেই বারো ভুঁইয়ার একজন ঈশা খাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণ করলেও স্থানীয় ঐতিহাসিক বীরদের সম্মানিত করার অজুহাত অন্তত দেওয়া যেতো।
তেজগাঁও বিমানবন্দর। পুরো পাকিস্তান আমলজুড়ে এই নাম বহাল ছিল, ব্যক্তির নামে নামকরণের প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু কুর্মিটোলায় নতুন বিমানবন্দর তৈরি শেষ হতে না হতেই জিয়াউর রহমানের নাম মুছে দিয়েছিল কুর্মিটোলাকে। কিছু দিন আগে সেই নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘হজরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর’। নামকরণের মূল উদ্দেশ্য ক্ষমতা প্রদর্শন এবং এ কাজে উৎসাহী লোকের অভাব নেই কোন দলেই। অ দল চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের নাম রেখেছিল স্থানীয় এক প্রয়াত নেতার নামে। ই দল ক্ষমতায় এসেই সেই নাম বদলে রাখলো এক স্থানীয় আউলিয়ার নামে। ভেবেছিল, আউলিয়ার নাম বদলাতে কেউ সাহস করবে না। সাহস তারা করেনি, তবে একই তরিকা অনুসরণ করে তারা ঢাকা বিমানবন্দরের নাম বদলে দিয়েছে। যদি ই দল হয় বাঘা ওল, অ দল তবে বুনো তেতুল!
যমুনা নদীর উপর তৈরি করা সেতুর নাম হবে ‘যমুনা সেতু’, এই তো স্বাভাবিক। কিন্তু না, নবনির্মিত সেতুটির নাম দেওয়া হলো ‘বঙ্গবন্ধু সেতু। সে নামটি অবশ্য টেকেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকার জিন্না এভেনিউ বঙ্গবন্ধু এভেনিউ রূপান্তরিত হলো। কি দরকার ছিল? জিন্নাহ্ খারাপ হোক, ভালো হোক ভারতবর্ষের ইতিহাসের অংশতো তিনি। বঙ্গবন্ধুরও প্রিয় নেতা ছিলেন তিনি। তাই বলে বঙ্গবন্ধুর নামে কোন রাস্তা হবে না? অবশ্যই হবে। নতুন রাস্তা বানিয়ে সে রাস্তার নাম ‘বঙ্গবন্ধু এভেনিউ’ দিলে তাতে বঙ্গবন্ধুকেও সম্মান করা হতো, জনগণও নতুন একটি রাস্তা পেতো। পি.জি. হাসপাতালের নাম যখন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতাল’ রাখা হয় তখনও অনেকে এ রকম যুক্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু চামচা না শোনে যুক্তির কাহিনী।
স্থাননাম যদি অতিপরিচিত হয় তবে তা বদলানো কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু ভবী ভোলে না এবং উদ্দেশ্যসাধনে অন্য এক পন্থা অবলম্বন করে। ‘নারায়ণগঞ্জ’ তখন হয়ে যায় ‘এন. গঞ্জ’, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ হয়ে যায় ‘বি. বাড়িয়া’। কেউ যদি এই কুযুক্তি দিতে আসে যে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ অনেক লম্বা নাম বলে মানুষ সংক্ষিপ্ত করে ‘এন. গঞ্জ’ উচ্চারণ করে তবে তাকে আমি জিগ্যেস করবো: ‘ফরিদপুর’ কেন তাহলে ‘এফ পুর’ হয় না বা ‘মোহাম্মদপুর’ হয় না ‘এম পুর’? ‘ব্রাহ্মণ’ এবং ‘ফরিদ’ এই দুই শব্দেই দু’টি অক্ষর বা সিলেবল। ‘নারায়ণ’ শব্দে তিনটি অক্ষর, ‘মোহাম্মদ’ শব্দেও তিনটি। চট্টগ্রামের ‘সীতাকুন্ড’ নামটিকে হ্রস্ব ইকার দিয়ে ‘সিতাকু-’ লেখেন অনেক মৌলবাদী জ্ঞানপাপী যাতে রামায়ণের নায়িকা সীতার আছর থেকে স্থানটিকে মুক্ত রাখা যায়। কিছুদিন আগে পত্রিকায় পড়েছিলাম, বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলের স্থাননাম পরিবর্তন করে রাখা হচ্ছে, ‘রামপুর’ হচ্ছে ‘রহিমপুর’, দুর্গাপুর হচ্ছে ‘দরগাপুর’ ইত্যাদি। স্থানীয় লোকেরা অবশ্য এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। আশার কথা, কিন্তু ভরসা পাই না।
স্থাননাম পরিবর্তনের অতিউৎসাহ বিদেশেও বিরল নয়। কয়েক বছর আগে কানাডার মন্ট্রিয়ল নগরীর মেয়র হটাৎ প্রস্তাব করলেন, নগরীর বিখ্যাত রাস্তা পার্ক এ্যাভেনিউর নাম বদলে Robert Bourassa (রোবের বুরাস্সা, কুইবেকের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী) এ্যাভেনিউ রাখা হোক। এটা মিসেস বুরাস্সার খায়েশ এবং মন্ট্রিয়লের মেয়র তা পূরণ করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু পার্ক এ্যাভেনিউর ইমিগ্র্যান্ট এবং কুইবেকোয়া বাসিন্দাদের বেশির ভাগ ১৮৮৩ সালে তৈরি এই রাস্তাটির নাম বদলাতে দিতে রাজি হননি। তাঁরা মিছিল করে সমস্বরে বললেন, ‘এই রাস্তা আমাদের ইতিহাস। আমাদের বাপ-পিতামহের বহু কষ্টের স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই রাস্তায়।’ যদিও প্রস্তাবটি মিউনিসিপ্যালিটি কমিটির সভায় ৪০:২২ ভোটে পাস হয়ে গিয়েছিল তবুও পার্কের অধিবাসীরা যুদ্ধে হার স্বীকার করেননি। তাঁরা কানাডার টোপোনিমিক্যাল কমিশনে আপিল করলেন। ‘টোপোনিমি’ কথাটার উৎপত্তি দু’টি গ্রীক শব্দ ‘টোপোস’ (স্থান) আর ‘ওনোমা’ (নাম) থেকে। এটি একটি বিজ্ঞান যার কাজ হচ্ছে স্থাননামের ইতিহাস ও ব্যুৎপত্তি অনুসন্ধান করা। কানাডাসহ অনেক দেশেই টোপোনিমিক্যাল কমিশন নামে একটি কর্তৃপক্ষ রয়েছে যার অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন বা ইমারতের মতো কোন বিশেষ অঞ্চলের স্থাননাম সংরক্ষণ করা। তাজমহলের পাথর খুলে এনে যেমন আপনি নিজের ড্রইংরুমে লাগাতে পারেন না তেমনি কোন স্থাননামও আপনি আপনার খেয়ালখুশি মতো বদলাতে পারেন না তা সে আপনি যেই হোন না কেন! খুশির খবর এই যে পার্ক এ্যাভেনিউর অধিবাসীদের প্রতিবাদের তীব্রতার ফলশ্রুতিতে মন্ট্রিয়লের মেয়র অবশেষে ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন যে এ্যভেনিউটির নাম আর বদলানো হবে না।
স্থাননামের বানানেরও পুরাতাত্ত্বিক মূল্য রয়েছে। ঢাকা’র পুরোনো ইংরেজি বানান Dacca যখন বদলানো হয়েছিল এরশাদের আমলে তখন আমার জানামতে একমাত্র মনসুর মুসা এর প্রতিবাদ করেছিলেন। স্থাননামের বানান না বদলানের পক্ষে যুক্তিগুলো হচ্ছে এই:
১. সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা গত পাঁচশ বছরের পুরোনো সব দলিলে বানানটি পরিবর্তিত করা সম্ভব হবে না;
২. এরকম বলা হয় যে ‘ঢাকা’ শব্দটি এসেছে ‘ঢক্কা’ থেকে। সম্ভবত এ কারণেই Dacca বানানে ডবল সি এসেছে। সুতরাং বানানটি আমাদের ইতিহাসের অংশ;
৩. সব শব্দের বানান শব্দের উচ্চারণকে অনুসরণ করে না। ইংরেজি ‘কফ’ বা বাংলা ‘পদ্মা’ শব্দের বানান লক্ষ্য করুন। ফরাসিরা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসকে বলে ‘পারি’ কিন্তু বানান করে Paris। কোন ফরাসির উর্বর মস্তিষ্কে শেষের অতিরিক্ত এস-টিকে বাদ দেওয়ার দুর্বুদ্ধি আসেনি। আমার যুক্তি হচ্ছে এই যে উধপপধ লিখেও ‘ঢাকা’ উচ্চারণ করা যেতো এবং তাই আমরা করে এসেছি গত শ দুয়েক বছর ধরে।
৪. ইংল্যাল্ডের রাজধানী ‘লন্ডন’ ফরাসিদের মুখে ‘লোন্দ্র্’। শব্দটির উচ্চারণ এবং বানান দুইই আলাদা। কোন ইংরেজ কি ফরাসিদের বলতে পারবে, আমরা যেমন করে ‘লন্ডন’ বানান করি তোমরাও তেমন করে বানান করো। পারবে না, কারণ একই শব্দ ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উচ্চারিত হয়, বানানও আলাদা হতে পারে। একইভাবে বানান করা শব্দ ‘লক্ষ্মী’ হিন্দি ও বাংলায় আলাদাভাবে উচ্চারিত হয়। ‘ঢাকা’র বাংলা উচ্চারণ ইংরেজিতে চলবেই এমন কোন কথা নেই। ইংরেজরা উচ্চারণ করতে পারতো না বলেই বাংলা শব্দ ‘চট্টোপাধ্যায়’ হয়ে গিয়েছিল ‘চ্যাটার্জী’ ঠিক যেমন করে ইংরেজি শব্দ ‘কেটল’ বাংলায় হয়ে গিয়েছিল ‘কেটলি’। প্রতিটি ভাষায় উচ্চারণদুষ্কর শব্দকে পোষ মানানোর আলাদা আলাদা নিয়ম আছে। ইওরোপীয় ভাষাভাষীদের স্বরযন্ত্রে বাংলার মহাপ্রাণ ‘ঢ’ ধ্বনিটি উচ্চারণ করা কঠিন বলেই ‘ঢাকা’ বানানটি ‘ডি এইচ’ এর বদলে ‘ডি’ দিয়ে শুরু করা হয়েছিল সম্ভবত পর্তুগীজ আমলে। বানাটি অনেক পুরোনো।
৫. মারাঠি ‘মুম্বাই’ যদি ইংরেজি ভাষার শব্দভান্ডারে ‘বোম্বে’ হয়ে ঢোকে এবং ইংরেজি ‘হসপিটল’ যদি বাংলায় হয়ে গিয়ে থাকে ‘হাসপাতাল’ তবে তাকে বদলানোর দরকারটা কি? বাংলায়তো আমরা ‘ঢাকা’ বা ‘কোলকাতা’ বলছিই, মারাঠিতে বলছি ‘মুম্বাই’ এবং মালয়লম ভাষায় ব্যাঙ্গালুরু। এখন ইংরেজিতে শব্দগুলোর বানান বা উচ্চারণ কি হওয়া উচিত তা নিয়ে আমরা বাঙালিদের এত মাথাব্যথা কেন? মোট কথা, ইংরেজি শব্দের বানান বা উচ্চারণ পরিবর্তনের অধিকার বাংলা, মারাঠী বা মালয়লমভাষীদের কে দিয়েছে? সেটা ইংরেজদের হাতে ছেড়ে দিলেই ভালো হতো না কি? যদি বলেন, ইংরেজি ভারতবর্ষেরও ভাষা আর সে কারণেই ইংরেজি শব্দের বানান পরিবর্তনের অধিকার আপনার আছে, তবে দয়া করে এক কাজ করুন, ইংরেজিতে যত সব বিদঘুটে বানান আছে সবগুলোর বানান আর উচ্চারণ বদলে দিন:Cough নতুন করে ফেলুন, Diarrhoea-তে সঠিকভাবে ভুগুন। Put-কে ‘পাট’ করে দিন But-কে ‘বুট’।
৬. ‘বোম্বে’-কে ইংরেজিতে ‘মুম্বাই’ বা ‘ব্যাঙ্গালোর’-কে ‘ব্যাঙ্গালুরু’ করাতে বা মন্ট্রিয়লের পার্ক এ্যাভেন্যুর নাম বদলাতে যে কোটি কোটি টাকা খরচ হবে সে টাকা শহরগুলোর উন্নয়নে ব্যয় করলেইতো হয়। পার্ক এ্যাভেনিউ নামের এক সমর্থক যেমন বলেছিলেন: ‘নাম বদলে কি হবে? এ্যাভেনিউটা মেরামত করলে বরং কাজ দিত।’ বোম্বে, ব্যাঙ্গালোর বা ঢাকার নামে পরিবর্তন এলেই কি এই শহরগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে? স্থাননাম বদলানো হচ্ছে জনগণকে ধোঁকা দেবার ব্যক্তিগত ও দলগত ফন্দিগুলোর মধ্যে একটি। ব্যক্তি বা দলের ফন্দি মাত্রেই জনমানুষের জন্যে ক্ষতিকর আর ফন্দীগুলো ‘আন্তর্জাতিক’ এ অর্থে যে পৃথিবীর সব দেশের নেতারাই স্থানের নামপরিবর্তনে যত উৎসাহী, স্থানের অবস্থা পরিবর্তনে ততটা উৎসাহী নন।
স্থান-কাল-পাত্র। কাল নিরবধি। স্থান আর পাত্র কিছুক্ষণের জন্যে কালকে দৃশ্যমান করে তুলে এবং একদিন অবধারিতভাবে কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। ইতিহাস হচ্ছে কালের সেই দৃশ্যমান অংশ। অমুক স্থানে ফলনা পাত্র কি কি করেছে তা জোড়া দিয়ে দিয়ে গঠিত হয় তমুক সময়ের ইতিহাস। যেমন ধরুন, সিরাজদৌল্লা আর পলাশী দৃশ্যমান করে ১৮ শতককে। মৃতব্যক্তির নাম বদলাতে কারো আগ্রহ নেই। সিরাজদ্দৌলা কখনও শিশিরদ্দৌলা হবে না – এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এখন ‘পলাশী’’র নাম বদলে যদি রাখা হয় ‘দুর্গাপুর’ তবে ইতিহাসের পায়ে কুড়ালটি বেশ ভালোভাবেই মারা হয়। ইতিহাস ধ্বংস হলে ক্ষতি কি? ক্ষতি গুরুতর। ইতিহাসের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে বর্তমানের একতলা আর ভবিষ্যতের দোতলা, তিনতলা। ভিত্তিটাই যদি দুর্বল করে দেয়া হয় তবে কোন ইমারতই আর দাঁড়াতে পারে না, সে ইমারতটি সমাজই হোক বা রাষ্ট্রই হোক।

Comments (6)

Leave a comment